চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: ২০ দিন আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বর্তমান সচিব খালেদ মাহমুদকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে চসিকের নতুন সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয় সরকারী আবাসন পরিদপ্তরের (গণপূর্ত) উপ-পরিচালক কাজী শহিদুল ইসলামকে। নিয়মানুযায়ী সরকারি এ দুই কর্মকর্তাই নিজ নিজ বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হয়ে যোগদান করবেন নতুন কর্মস্থলে। মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুসারে চসিকের সচিব পদে যোগদান করেন কাজী শহিদুল ইসলাম। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল।
তবে বিপত্তি ঘটে এ কর্মকর্তা (কাজী শহিদুল ইসলাম) যখন সোমবার (৭ আগস্ট) চসিকে যোগদান করতে আসেন। কারণ সদ্য বদলি হওয়া বর্তমান সচিব খালেদ মাহমুদ তাঁর দায়িত্ব থেকে অবমুক্ত না হওয়ায় কর্মস্থলে এসেও সচিবের দায়িত্বভার পাননি নতুন সচিব। এমনকি বসতে পারেননি সচিবের রুমেও।
এরইমধ্যে সোমবার (৭ আগস্ট) বিকেলে চসিকের বর্তমান সচিব খালেদ মাহমুদের বদলির আদেশ বাতিল করলো মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ বর্তমান সচিব তাঁর পদেই বহাল থাকছেন। আবার চসিকে সদ্য যোগদান করা নতুন সচিবকে অন্য কোথাও পদায়ন বা বদলির কোনো আদেশই জারি করেনি মন্ত্রণালয়। এ যেন এক সিটি কর্পোরেশনেই দুই সচিব।
এমন বিস্ময়কর ঘটনা জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয় মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনেও। যেন গায়ের জোরেই পদ বাঁচালেন বর্তমান সচিব খালেদ মাহমুদ। তবে এর আগেও এক দফা বদলি করা হয়েছিলো তাকে। শেষ পর্যন্ত চসিকের শীর্ষকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করেই টিকিয়ে রেখেছিলেন সচিবের চেয়ার। একইভাবে আবারও বদলির আদেশ প্রত্যাহার করিয়েছেন চসিকের প্রভাবশালী এ কর্মকর্তা।
চসিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জুলাই চসিকের সচিব পদে কাজী শহিদুল ইসলামকে পদায়ন এবং বর্তমান সচিব খালেদ মাহমুদকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান হিসেবে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়। নিয়মানুযায়ী গত ২৬ জুলাই বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হয়ে ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব পদে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন কাজী শহিদুল ইসলাম। পরবর্তীতে গত ২ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মাহবুবা আইরিনের স্বাক্ষরিত আরেকটি প্রজ্ঞাপনে ৩০ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব পদে কাজী শহিদুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সচিব পদে গত ৩ আগস্ট চসিকে যোগদান করার কথা থাকলেও সোমবার (৭ আগস্ট) যোগদান করতে আসেন এ কর্মকর্তা। তবে এরমধ্যেই ‘দাবার চাল’ উল্টে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মেহেদী হাসানের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়— ‘বর্তমান সচিব খালেদ মাহমুদের বদলির আদেশ বাতিল করা হলো’।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই রাতে চসিকের বর্তমান সচিব খালেদ মাহমুদের মা মারা যান। মায়ের মৃত্যুর কথা বলে তিনি প্রথমে মৌখিকভাবে ১৫ দিন পর নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবার অনুমতি নেন। সচিবের চেয়ার না ছাড়তে পরবর্তীতে চসিক মেয়র থেকে বদলি প্রত্যাহারের ডিও লেটার (আধা সরকারি পত্র) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে নানাভাবে তদবির চালান এ কর্মকর্তা। শেষমেষ বদলির আদেশ প্রত্যাহার করিয়ে আনলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন সচিব যোগদান করতে এলে এ সচিব মেয়রের নির্দেশ ছাড়া তাকে রুমেও ঢুকতে দেননি। সারাদিন তিনি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের রুমে ছিলেন। দুপুরের খাবার খেয়েছেন প্রধান নিবার্হী ও প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে। এই বিষয়টি খুবই দৃষ্টিকটু। যেহেতু নতুন সচিবের আদেশ বাতিল হয়নি। আবার বর্তমান সচিবও বহাল থাকছেন। পুরো ব্যাপারটি রীতিমতো হাস্যকর হয়ে গেছে।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের মেয়র গেছেন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। যতটুকু শুনেছি এরই ফাঁকে তিনি বদলির আদেশ বাতিল করিয়ে এনেছেন। এই সচিবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় গুরুতর অভিযোগ উঠার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কীভাবে কীভাবে যেন বরাবরই টিকে যান তিনি।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমিও শুনেছি বদলির আদেশ বাতিল হয়েছে। আসলে এ আদেশগুলো (বদলি-নিয়োগ-পদায়ন) করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় আদেশ করেছেন বলে তিনি (নতুন সচিব) যোগদান করেছেন। এখন যেহেতু বাতিল করা হয়েছে জনপ্রশাসন হয়তো আরেকটি আদেশ দিবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন সচিব স্থানীয় সরকার বিভাগে যোগদান করেছেন কিন্তু আমরা তাকে এখনও যোগদান করাইনি। খালেদ মাহমুদ রিলিজ (অবমুক্ত) হলে উনি বসতেন। মেয়র মহোদয় এলে তিনি দায়িত্ব পেতেন। এরমধ্যে যেহেতু জনপ্রশাসন সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন বাকিটাও উনার বুঝবেন।