এডভোকেট মো: শামীম মিয়া : একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করার আগে আপনি কি নিশ্চিত হয়েছেন ঝামেলামুক্ত কিনা? মূল কথা হচ্ছে ফ্ল্যাটটির যাবতীয় দলিল- দস্তাবেজ এবং জমি- জমার সব দলিল সঠিক আছে কিনা? বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অফারের ফাঁদে পড়ে আর অসতর্কতার কারনে আপনি সর্বসান্ত হয়ে যেতে পারেন। তাই ফ্ল্যাট কেনার আগে কিছু বিষয় আপনাকে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে এবং থাকতে হবে সাবধান।
১. যে প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তির ফ্ল্যাটটি কিনতে যাচ্ছেন তার মালিকানা আছে কিনা, প্রথমে সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। এ জন্য প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি যে জমিতে অবস্থিত তার সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রয়কারীর নাম উল্লেখ আছে কিনা এবং CS, RS সহ অন্যান্য খতিয়ানের ক্রম মিলিয়ে দেখতে হবে। আর রিয়েল এস্টেট কোম্পানিটির যথাযথ নিবন্ধন আছে কিনা এবং রিহ্যাবের সদস্য কিনা জেনে নিতে হবে। জমিটি যদি ডেভেলপার কোম্পানি কোন মালিকের কাছ থেকে নিয়ে থাকে, তাহলে এ সম্পর্কে চুক্তিপত্র আছে কিনা যাচাই করতে হবে।
২. জমিটির নামজারি ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করতে হবে। বিক্রয়কারী ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিক হয়ে থাকলে বন্টনের মোকদ্দমা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।
৩. জমিটির হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। ভূমি কর না দেওয়ার কারনে কোন সার্টিফিকেট মামলা আছে কিনা, এ বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। জমিটির ওপর অন্য কোন মামলা আছে কিনা, জেনে নিতে হবে।
৪. বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি সরেজমিনে নকশার সঙ্গে বাস্তব অবস্থা মিলিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী ভূমি মালিকদের কাছ থেকে দাগ- খতিয়ান জেনে মেলাতে হবে। অবশ্যই স্পষ্ট করে সব শর্ত উল্লেখ করে আইনগত উপায়ে চুক্তি সম্পাদন করে একটি কপি নিজের কাছে রাখতে হবে।
৫. ফ্ল্যাটটির ভবন নির্মানের জন্য রাজউকের অনুমোদন আছে কিনা এবং এ সংক্রান্ত সনদ দেখে নিতে হবে। বিদ্যুৎ- সংযোগ আছে কিনা এবং তা থাকলে এ বিদ্যুৎ বিল কি বানিজ্যিক না আবাসিক তা যাচাই করে নিতে হবে। গ্যাস- সংযোগ নেওয়ার কথা থাকলে তা আইনগতভাবে নেওয়া হয়েছে কিনা দেখতে হবে। যদিও বর্তমানে নতুন ফ্ল্যাটে গ্যাস- সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
৬. প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি সরকারের খাস জমিতে পড়েছে কিনা কিংবা সরকারের কোন স্বার্থ থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। জমিটি অর্পিত সম্পত্তি কিংবা পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় আছে কিনা, সেটাও দেখতে হবে। জমিটি আগে কোন সময় অধিগ্রহন হয়েছে কিনা বা প্রক্রিয়াধীন কিনা, ওয়াকফ, দেবোত্তর অথবা কোর্ট অব ওয়ার্ডসের জমি কনা, তা খেয়াল রাখতে হবে। জমিটি কখনো খাজনা অনাদায়ের কারনে নিলাম হয়েছে কিনা, খোজ নিতে হবে।
৭. ঋনের জন্য ফ্ল্যাটটি কোন ব্যাংকের কাছে বন্ধক আছে কিনা, তা খেয়াল রাখতে হবে।
৮, জমিটির মালিক কোন আমমোক্তার বা অ্যাটর্নি নিয়োগ করেছে কিনা, জেনে নিন। আমমোক্তার সঠিক কিনা যাচাই করে দেখতে হবে। বিক্রেতা যদি আমমোক্তার নামার মাধ্যমে ক্ষমতা পেয়ে থাকে, এর বৈধতা যাচাই করতে হবে। প্রকৃত মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে হবে প্রকৃত মালিক যথাযথ কিনা এবং আমমোক্তারটি যথাযথ হয়েছে কিনা।
৯. কোন প্রকার মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ফ্ল্যাটটি না কিনে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কেনা ভালো, যদি কিস্তির মাধ্যমে কেনার কথা থাকে, তাহলে কয় কিস্তি এবং হস্তান্তর কবে হবে, এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট করে চুক্তিনামায় লেখা থাকতে হবে। যদি কোন কারনে না কেনা যায়, তাহলে এটি কীভাবে নিষ্পত্তি হবে, তাও ষ্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে।
১০. ফ্ল্যাটটি এর আগে অন্য কারও কাছে বিক্রি হয়েছে কিনা, খোঁজ নিতে হবে। সব ধরনের চার্জ, রেজিষ্ট্রেশন ফি এবং দায়- দায়িত্ব স্পষ্ট করে জেনে নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোন ধরনের জটিলতা তৈরি না হয়।
উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে আশা করি কোন প্রকার ঝামেলা থাকবেনা।
লেখক : আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট।