নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বন বিভাগের অধীন শহর রেঞ্জের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্রতিদিন কাঠ, বাঁশ ও ফার্ণিচারের ট্রাক গাড়ী হতে দৈনিক লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক টোল প্লাজা এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে শহর রেঞ্জের বন কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছেন। ওই সময় শহর রেঞ্জ থেকে চাঁদা নিতে অংশ নেওয়া ওই গাড়ির নম্বর চট্ট মেট্টো হ-২৭৭৮৮৭ বলে জানা যায়। একই সময়ে মাঝেমধ্যে বন বিভাগের একটি মোটর সাইকেলকেও অভিযানে অংশ নিতে দেখা যায়।
জানা যায়, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাঠ বহনকারী লরি ও ট্রাকগুলোকে টোলপ্লাজার সামনে দাঁড় করিয়ে বন বিভাগকে চাঁদা আদায় করতে দেখা গেছে। এতে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে কাঠ ব্যবসায়িরা। দীর্ঘ কয়েক মাসের অনুসন্ধানে তথ্য মিলে, কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক টোল প্লাজা এলাকা দিয়ে প্রতিদিন কাঠ বহনকারী ৩০ থেকে ৪০ টির মতো গাড়ি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ওপর দিয়ে আসা যাওয়া করে।
এ সময় শহর রেঞ্জ বিভাগের বন কর্মকর্তারা কাগজপত্র পরীক্ষার নামে প্রতিটি গাড়িকে মইজ্জ্যারটেক টোলপ্লাজার সামনে পাশ কাগজের মাঝখানে প্রতি গাড়ি থেকে ২ হাজার, দেড় হাজার ও কখনো কখনো মিনি ট্রাক থেকে ১ হাজার টাকা নিতে দেখা যায়। বন বিভাগের এই চাঁদাবাজিতে স্থানীয় পুলিশের নামেও ২০০ টাকা রাখা হয় বলে জানা গেছে। এতে অনেক গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও চাঁদা দিতে হয় পরিবহন শ্রমিকদের।
গত কয়েক মাসের অনুসন্ধানে তথ্য মিলে, প্রায় সময় এ সড়কে কাঠ ও বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ বহন করে একই পরিবহন। এরমধ্যে বেশির ভাগ ট্রাক। মাস জুড়ে কাঠ পরিবহনে দেখা যায়। ট্রাক নম্বর চট্ট মেট্টো ট ১১০৮৬৫, চট্ট মেট্টো ট ১১১১২৩, চট্ট মেট্টো ঝ ৮০৭২২, শেরপুর ঠ ১১০০০৬, চট্ট মেট্টো-ঠ ২২০০৭১, চট্ট মেট্টো ঠ ১১১০২২, চট্টমেট্টো ঠ ১২০৬৭৯, চট্ট মেট্টো ঠ ১৪১৪১২, চট্ট মেট্টো ঠ ১১০১০১, চট্ট মেট্টো ঠ ৬২০২৪৬, চট্ট মেট্টো ঠ ১১৪১৩৭ ও ঢাকা মেট্টো ঠ ১৪১২৪১।
অভিযোগ এসব গাড়ি প্রতিনিয়ত কাঠ, ফার্ণিচার ও বাঁশসহ বিভিন্ন বনজ সম্পদ চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে পরিবহন করে আসছেন। চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকার তিনটি জেলা ও চট্টগ্রামের বিভাগের অন্য জেলা থেকে আসা বনজ কাঠ, ফার্ণিচার ও বাঁশসহ বিভিন্ন বনজ দ্রব্য বিভিন্ন জেলায় পরিবহনে সংশ্লিষ্ট জেলার বন বিভাগ হতে ট্রানজিট পাশের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু পণ্য পরিবহন হতে পণ্য গন্তব্যস্থলে যাওয়া পর্যন্ত যেকোন সড়কে স্থাপিত প্রতিটি বিটে দিতে হয় চাঁদা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্বেও সংশ্লিস্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা পূরণে বাধ্য হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগের অধীনে শহর, রাঙ্গুনিয়া, পদুয়া, পটিয়া কালীপুর জলদি, বারবাকিয়া, চুনতি, মাদারসা, কুরশিয়া, দোহাজারি, পোমরা পরীক্ষণ ফাঁড়ি, পটিয়া এসএফএনটিসির আওতাধীন ৩৬টি বিট রয়েছে। রয়েছে কোষ্টাল উপকুল, বোটানিক্যাল গার্ডেন, কক্সবাজার উত্তর- দক্ষিণ, লামা, বান্দরবান, পালবোর্ড বান্দরবান, বন ব্যবহারিক বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন বন বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চল।
চট্টগ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী আব্দু রহমান বলেন, ‘কাঠ পরিবহনে ট্রানজিট পারমিশন থাকার পরও প্রতিটি বিটকে টাকা দিয়ে আসতে হয়। না দিলে গাড়ি ঘন্টার পর ঘন্টা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দাড় করিয়ে রাখে। কাঠ চিজ বা মামলা করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এজন্য বাধ্য হয়ে তাদের চাঁদা দিতে হয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মইজ্জ্যারটেক টোলপ্লাজায় কর্মরত এক কর্মচারী বলেন, ‘আমাদের টোল প্লাজার সিসিটিভি গুলো পরীক্ষা করলে দেখা যাবে বনবিভাগের লোকজন প্রতিদিন এসে কিভাবে চাঁদাবাজি করে। শহর থেকে বনবিভাগের গাড়িতে করে এসে টোলে বসেন। এরপর চারজন দু’পাশে দাঁড়িয়ে চাঁদা আদায় করেন।’
অথচ কোন অবৈধ কাঠ ধরা পড়লে ১৯৮৭ সালের ৬৮ ধারা মতে মামলা করে দেওয়া হয়। কোন বনজ দ্রব্য অবৈধ ভাবে পরিবহনে ধরা পড়লে ১৯২৭ সালের বন আইন পরবতির্তে ১৯৯০ সাল ও ২০০০ সালের সংশোধিত বন আইনের বিধান অনুযায়ী মামলা বা জরিমানা করা হয়। পটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা নূরে আলম হাফিজ বলেন, ‘আমাদের জনবল কম। কর্ণফুলীতে এসে ডিউটি করার মত লোক নেই। আর মইজ্জ্যারটেকে যারা বসে ডিউটি করেন তাঁরা শহর রেঞ্জের লোকজন।’
চট্টগ্রাম শহর রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মো. আরিফুল আলম বলেন, ‘মইজ্জ্যারটেকে যে গাড়িটি দাঁড়িয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে চাঁদাবাজি করে বলছেন। সেটি আমার গাড়ি নম্বর নয়। তবুও মিতসুবিশি ওই গাড়ির নম্বর মিলিয়ে দেখব। আমি নোট করে রাখলাম। আমি এখন ট্রেনিং এ আছি। পরে কথা বলব।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। শহর রেঞ্জের অভিক্ষেত্র কতটুকু তাও দেখে জানাব। সম্ভব হলে অভিযুক্ত ছবি, ভিডিও ও গাড়ির নম্বর আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে পারেন। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘টোলপ্লাজায় বসে চেকপোস্টের নামে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানিয়েছেন ।’ কিন্তু অবাক করা বিষয় গতকাল বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য নেওয়ার পর ওই গাড়ির আর দেখা মিলেনি টোলপ্লাজায়।