তিমির বনিক, ষ্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিয়ের প্রলোভনে দরিদ্র পরিবারের এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে মুহিবুর রহমান নামের এক প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন- কুলাউড়া উপজেলা বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী ওই কলেজ ছাত্রী কুলাউড়া থানা ও মৌলভীবাজার নারী-শিশু আদালতে মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন। মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগশন (পিবিআই) মৌলভীবাজারকে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
মামলা সুত্রের বরাতে জানা যায়, উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের হিঙ্গাজিয়া (তামার পাড়া) গ্রামের মৃত সাজিদ মিয়ার ছেলে কুলাউড়া উপজেলা বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান ২০২০ সাল থেকে একই এলাকার দরিদ্র জনৈক ব্যক্তির কলেজ পড়ুয়া মেয়ে (২৬) কে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করে আসছেন।
কিন্ত মুহিবুর রহমান ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও তাঁর স্ত্রী সন্তান থাকায় ওই ছাত্রী প্রেমের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে। পরে মুহিবুর ওই ছাত্রীকে বিয়ে করবেন বলে প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। সময়ের ব্যবধানে এটি প্রেম থেকে একপর্যায়ে শারিরীক সম্পর্কে গড়ায়। এভাবে গত দু’বছরে একাধিকবার ওই কলেজ ছাত্রীর সাথে শারিরীক সম্পর্কে লিপ্ত হন মুহিবুর রহমান।
মুহিবুরের লালসার স্বীকার ওই কলেজ ছাত্রী তাকে বিয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন থেকে চাপ প্রয়োগ করলেও সে নানা রকম টালবাহানা শুরু করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে কলেজ ছাত্রী গত ২৯ মে দুপুরে মুহিবুরকে স্থানীয় বাজারে পেয়ে তাঁর বিয়ের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য জোর দাবি জানায়।
এসময় মুহিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের লোকজন কলেজ ছাত্রীকে বেঁধড়ক পিঠিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে নির্যাতিতা কলেজ ছাত্রী মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে চিকিৎসা নেন। পরে ৩১ মে কুলাউড়া থানায় মুহিবুরের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।
পর দিন (১ জুন) বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা (নং-৩০০/২০২৩) দায়ের করেন।
পৃথক দুটি অভিযোগ হওয়ার পর থেকে মুহিবুর রহমান বর্তমানে এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ তাঁর খোঁজ পাচ্ছে না। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ রয়েছে। তিনি উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন বলে জানা গেছে। এমনকি ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে দুই বার আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন।
নির্যাতিতা কলেজ ছাত্রী জানান, মুহিবুর রহমান প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাকে বিভিন্ন রকমের হুমকি দিচ্ছে। যার কারনে তার পরিবার নিয়ে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
অভিযুক্ত মুহিবুর রহমান জানান, ওই কলেজ ছাত্রী তাঁর বিবাহিত স্ত্রী। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানে জন্য চেষ্টা চলছে। সোমবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুছ ছালেক বলেন, কলেজ ছাত্রী মুহিবুর রহমানকে অভিযুক্ত করে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দিয়েছেন।
তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগশন (পিবিআই) মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, খোঁজ নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবা।