সেলিম রেজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আলোচিত নবম শ্রেণী পড়ুয়া স্কুলছাত্র সুমন (১৫) হত্যা মামলার ১২জন আসামীকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করে মামলা রফা করেছেন বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম।
উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদে গতকাল শনিবার দিনব্যাপী শালিস বৈঠক বসিয়ে বিবাদী পক্ষকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বাদি পক্ষকে মামলা নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
বেলতৈল ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালীরা বাদী পক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে এবং নানা কৌশলে বাগে এনে বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদে শনিবার দিনব্যাপী সালিশ বৈঠক করে ১৫ লাখ টাকায় আপোসের জন্য রায় দিয়েছেন বেলতৈল ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। আর এ রায় ঘোষণা করেন হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি আব্দুল মাজেদ।
নিহত সুমন উপজেলার বেলতৈল গ্রামের সুলতান প্রামাণিকের ছেলে ও বেলতৈল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিল।
গত শনিবার দিনব্যাপী ঘটা করে বেলতৈল ইউনিয়নের ১নং ইউপি সদস্য আব্দুস ছালাম রাজার আহ্বানে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্কুলছাত্র সুমন হত্যার শালিস করেন জালালপুরের আব্দুর রশিদ, হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মাজেদসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৫ সদস্যের রায় বোর্ডের পক্ষে রায় ঘোষণা করছেন হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি আব্দুল মাজেদ। তিনি বলছেন, শিশুরা মার্ডার করেছে এটা সত্য। বাদির পারিবারিক অবস্থা ভালো না। সেই দৃষ্টিকোন থেকে আমরা আলোচনা করে ১২ জন আসামীকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেছি যে টাকা বাদি পক্ষকে দেওয়া হবে বলে রায় ঘোষনা করেন তিনি।
জানা যায়, গত বছর ১২ জুন রবিবার বিদ্যালয়ের অর্ধ বার্ষিকী পরিক্ষার সময় তার সহপাঠী ২/৩ জন ছাত্র তার খাতা দেখতে চাইলে সুমন খাতা দেখাতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার সহপাঠী রাকিব, রতন ও নাছিরের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন সুমনের পথরোধ করে হামলা চালায়। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে সুমনকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে সুমনের অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিরাজগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হাসপাতালে স্থানান্তর করে এবং সেখান থেকে আরও অবনতি হলে বগুড়া শহিদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। সেখানে ৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ২২ জুন সুমন মারা যায়।
এরপর গত বছরের ২৪ জুন সুমনের পিতা সুলতান প্রামানিক ১২ জনকে আসামি করে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করে হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে চার্জশীট প্রেরন করে। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
অপরদিকে গত বছরের ২৯ জুলাই সুমন হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চর-কাদাই গ্রামে মানববন্ধন করে গ্রামবাসী ও নিহতের স্বজনেরা। আর এই মানবন্ধনেই ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম উপস্থিত থেকে সুমন হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এভাবে হত্যা মামলার মত বিচার ইউপি চেয়ারম্যান এবং প্রভাবশালীরা করতে পারে না এবং এ ধরনের বিচার অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তুলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞ আইনজীবিসহ সুশিলসমাজ।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে শালিস বৈঠকের আহ্বায়ক বেলতৈল ইউপি সদস্য আব্দুস ছালাম রাজা জানান, বিচার করে আসামীদের ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের বিচার করা যায় কিনা সেসব আইন কানুন জানা নাই।
এদিকে প্রভাবশালীদের কারনে চেষ্টা করেও বাদি পক্ষের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে না পেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে বিজ্ঞ আইনজীবি এ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন, গ্রাম্য সালিশ বা কোন চেয়ারম্যান হত্যা মামলার বিচার করতে পারে না এবং এ ধরনের কোন আইন বাংলাদেশে নাই; যদি করে থাকে তাহলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অন্যায় ভাবে করেছে। এ ধরনের বিচার অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তুলবে বলে মনে করেন এই বিজ্ঞ আইনজীবি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, তারা শালিস বৈঠক করে যেটাই করুক মামলা তো আছে কোর্টে। এটা কোর্টের মাধ্যমেই ফয়সালা করতে হবে।