তিমির বনিক, ষ্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ কাজ।
২০১৪ সালে প্রথম পর্যায়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘ ৮ বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অন্যান্য উপজেলায় দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ ধাপে বরাদ্দ পেয়েও আমাদের আগে মসজিদ নির্মাণ শেষ হয়ে উদ্বোধন হয়ে গেছে।
কিন্তু শ্রীমঙ্গলে এখনও নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়াটা খুব দুঃখজনক। আরো কতো বছর লাগবে কে জানে? আদৌ হবে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন তুুলেছেন কেউ কেউ।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায়ই সর্বপ্রথম মডেল মসজিদ নির্মিত হওয়ার কথা ছিলো। ইসলামিক ফাউন্ডেশন শ্রীমঙ্গল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কয়েকটি সম্ভাব্য স্থানের নাম আসলে সবকটি নামের বিপরীতে আসে আপত্তি। এতে করে আটকে আছে মডেল মসজিদের কাজ।
প্রথমে শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ রোড, পরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর এলাকার রাধানগর জামে মসজিদ, পর্যায়ক্রমে শহরতলীর সুনগইড় জামে মসজিদ, শহরস্থ ভানুগাছ রোডের রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদ, পৌরসভাস্থ শ্যামলী জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষ-কে সংশ্লিষ্ট মসজিদ-কে মডেল মসজিদ করার প্রস্তাব দেয়া হয়।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট মসজিদ কমিটির কেউ প্রস্তাবে সম্মতি দেননি। এরপর পৌরসভার কালিঘাট রোডের ফিনলে চা কোম্পানির জায়গা (চলন্ত্রিকা ক্রীড়া মাঠের পাশে) এবং ভানুগাছ রোডের রেলওয়ের জায়গাসহ (মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স) একাধিক স্থানে ভূমি দেখার পর নানা কারণে শুরু হয়নি প্রকল্পের কাজ।
সর্বশেষ শহর থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূূরে অবস্থিত হবিগঞ্জ-ঢাকা হাইওয়ে রোডের দক্ষিণ উত্তরসুর এলাকার দ্বারিকাপাল মহিলা ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
সরেজমিন রোববার ২১ মে দেখা যায়, অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত জায়গায় একটি টিনশেড ঘরে শ্রী কৃষ্ণ দেবালয় এর সাইনবোর্ড ঝুলছে। মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সোস্যাল মিডিয়ায় নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
স্থানীয় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা পোস্ট-কমেন্টে উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত পর্যটন নগরীতে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করার অনুরোধ করছেন প্রতিনিয়ত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রের বরাতে আরও জানা যায়, দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সারা দেশে এ প্রকল্পের কাজ চললেও জায়গা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে আছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার এই মসজিদ নির্মাণ প্রক্রিয়া। অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
ধর্ম মন্ত্রনালয়ের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী সারাদেশে ৫৬৪ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগের মধ্যে ইতোমধ্যে শতভাগ নির্মাণকাজ শেষে ২০০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মধ্যে সারা দেশের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নেওয়া প্রকল্পটি তদারকি করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। মসজিদগুলো নির্মাণকারী হিসেবে কাজ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ধর্ম মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলা সদরের মসজিদগুলো তিনতলা বিশিষ্ট হবে।
এতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ অজু ও নামাজের জন্য পৃথক পৃথক জায়গা ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে হজ্ব গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য রেজিষ্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণকেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক লাইব্রেরি, দাফনের আগের আনুষ্ঠানিকতা, কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, হিফজখানা, দেশি বিদেশি অতিথিদের জন্য থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি থাকবে শৌচাগারের ব্যবস্থা।
যেকোন মানুষ এই কেন্দ্র থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য যেসকল কাজ দরকার সব করতে পারবেন। সাধারন মানুষের জন্য উপকারী সরকারের এই প্রকল্পটি শ্রীমঙ্গল উপজেলায় আটকে গেছে। ২০২৪ সালে সারা দেশের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে জায়গার জটিলতা কাটেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাঠ সুপাভাইজার মো. আব্দুল বারী বলেন, এ প্রকল্পটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হলেও দায়-দায়িত্বে আমি নেই। সার্বিক দায়িত্বে উপজেলা ইউএনও, ইফা জেলা ডিডি, গণপূর্তবিভাগের।
মসজিদ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে যখন যেভাবে কাজ করতে বলবেন আমি সেভাবেই করি, করবো। আমি ইতিপূর্বে অনেক জমি দেখে অফিসকে জানিয়েছি। জমি জটিলতায় মসজিদ হচ্ছে না এতটুকুই আমি জাানি। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে হলে ইউএনও স্যার, ডিডি স্যার বা গণপূর্ত বিভাগে যোগাযোগ করুন। সারা দেশে ২০০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন হলেও এখনও কাজই শুরু হয়নি শ্রীমঙ্গলের কারণ জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ারুল কাদির বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় সাত উপজেলার মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সবার আগে মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হবার কথা ছিল।
আমরা প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প বরাদ্দ পেয়ে ২০১৭ সালে শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ রোডস্থ সুরমা ভেলী মসজিদের পাশে জায়গাও চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু সেখানে স্থানীয় মসজিদ কমিটির দ্বন্দ্বে মডেল মসজিদ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চার দফায় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় শ্রীমঙ্গলের মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
কাজের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন জানান, শ্রীমঙ্গল মডেল মসজিদের জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্মাণ কাজ শুরু করাটা সম্ভব হয়নি।
আমরা ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি, অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন হলে আশা করি অতি দ্রুত নির্মাণ কাজের শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি।