সেলিম রেজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ঘুষ আদায়ের অভিযোগে পুলিশের দুই উপ-পরিদর্শককে (এসআই) প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ মে) কাজিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যাহার হওয়া দুই এসআই হলেন-আবুল হোসেন ও শহিদুল ইসলাম শহিদ। তারা কাজিপুর থানায় কর্মরত ছিলেন।
ওসি শ্যামল কুমার বলেন, গত ১৩ মে সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের ভাঙারি ব্যবসায়ী লাভলু ইসলামকে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ মে) রাতে তাদের পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিকটিম লাভলু ইসলাম গত সোমবার (১৫ মে) সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (রাজশাহী) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) অনুলিপি দেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুই এসআইকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।’
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এসআই আবুল হোসেন ও শহিদুল ইসলাম শহিদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে লাভলু ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালান। তারা লাভলু ইসলামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালান। স্থানীয় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন লোকের উপস্থিতিতে পুলিশ তল্লাশি চালায়। এ সময় লাভলু ইসলাম এমন তল্লাশির কারণ জানতে চাইলে এসআই আবুল হোসেন তাকে হুমকি দেন।’
এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স চেক করতে হবে বলে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন লাভলুকে। প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে মহিষামুড়া চৌরাস্তা বাজারের পূর্বপাশের মহিলা মাদ্রাসার পেছনে নিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়। পরে তার কাছে থাকা সিমেন্ট বিক্রির ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন পুলিশ সদস্যরা। একই সঙ্গে লাভলু ইসলামের চোখ বেঁধে আরও ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোসহ মারধরেরও ভয় দেখানো হয় ভুক্তভোগীকে।
লাভলু রতনকান্দি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ওসমান গনি ও আব্দুস সাত্তারকে ফোন দিয়ে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মহিষামুড়া মহিলা মাদ্রসার পেছনে আসতে বলেন। পরে রতনকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, একডালা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তারসহ পাঁচ থেকে সাতজন ঘটনাস্থল আসেন।
এ সময় লাভলু ইসলামের কাছে দাবি করা ৩০ হাজার টাকা নিয়ে এসআই আবুল হোসেন ও এসআই শহিদুল ইসলাম শহিদের সঙ্গে আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে আরও ১০ হাজার টাকা তাদের দেওয়া হয়। মোট ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে লাভলুকে দুই পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেন তারা।
এ বিষয়ে এসআই আবুল হোসেন ও শহিদুল ইসলাম শহিদ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, একটি চুরি করা সাইকেল ওই দোকানে বিক্রি করা হয়েছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে লাভলু ইসলামের ভাঙারি দোকানে তল্লাশি করা হয়। কিন্তু তারা কোনো টাকা ঘুষ নেননি।