বেনাপোল প্রতিনিধি : দেশজুড়ে কৃষকরা মাটির উর্বরা শক্তি বাড়িয়ে চাষে উপকারিতা পাওয়া এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় কম্পোস্ট সার ব্যবহারে দিনে দিনে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আবার অনেকেই বাড়িতে সামান্য পুঁজি নিয়েই বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, সবদিক বিবেচনায় এ পরিবেশবান্ধব জৈব সার আমাদের কৃষির জন্য অত্যন্ত উপকারী হয়ে উঠতে পারে। আমাদের কৃষির স্বার্থে এ সারের ব্যাপক প্রসার ঘটানো প্রয়োজন বলে জানান শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ মন্ডল।
তিনি বলেন, ‘ভার্মি কম্পোস্ট’ অর্থাৎ এ কেঁচো সারের বিশেষত্ব হলো এটি হিউমাস সমৃদ্ধ জৈব সার। এটি মাটির উর্বরতা ও গাছের বৃদ্ধিসহ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং মাটির লবণাক্ততা কমায়। এছাড়াও এ সার মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায় এবং এটি রাসায়নিক বিষমুক্ত। এ জৈব সার ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়।
জানা যায়, উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসাবে কেঁচোর বিষ্ঠা বা মলের মাধ্যমে যে জৈব সার তৈরি করা হয় তাকেই ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট বলা হয়। এবার দেশের অন্য এলাকার মতো সেই ভার্মি কম্পোস্টকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে সফল যশোর জেলার শার্শা উপজেলার ছোট নিজামপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত জায়গা জুড়ে প্রায় ৫০টি রিং ও ২০টি চারি এবং সিমেন্টের তৈরি ১০০ ফুট লম্বা হাউজ নিয়ে তৈরি করেছেন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন কেন্দ্র। প্রথমে গোবর সংরক্ষণের জন্য টিনের চালায় রাখা হয়েছে। তারপর সেই গোবর হালকা শুকিয়ে রিং বা হাউজে দিয়ে কয়েকদিন রাখার পরই তাতে কেঁচো দিয়েই ৩৫-৪০ দিনেই উৎপাদন হয় ভার্মি কম্পোস্ট বা জৈব সার। সেটা বাজারজাত করতে প্রস্তুুত করা হয় বাছাই ও প্যাকেটজাত।
কম্পোস্ট সার উৎপাদনের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, মূলত সর্বপ্রথম নিজের চাষের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সারের প্রয়োজনের জন্য ২০১৯ সালে করোনার মধ্যে শুরু থেকেই স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অসিত কুমার মন্ডল এর সার্বিক পরামর্শে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ১৬ রিং ও প্রয়োজনীয় কেঁচোসহ সকল উপকরণ নিয়ে এই প্রজেক্টের যাত্রা শুরু। এরপর অসিত কুমার মন্ডলের দিকনির্দেশনা ও নিজের পরিশ্রমের ফলে মাত্র ৩ বছরে ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। বর্তমানে এখান থেকে মাসিক প্রায় ২-৩ টনের অধিক ভার্মি কম্পোস্ট বাজারজাত করা হয়। তাছাড়া বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকাতে বাজারজাতে কোনো সমস্যা হয় না।
তিনি আরও বলেন, শাকসবজির ফেলে দেওয়া অংশ, অর্ধ-পচা গোবর একসঙ্গে মিশিয়ে সেখানে কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। কেঁচো সেসব ময়লা খেয়ে মলত্যাগ করে পচিয়ে ফেলে ও বংশবিস্তার করতে থাকে। কেঁচোর পচিয়ে ফেলা দ্রব্যই মূলত জৈব সারে পরিণত হয়। প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে এই জৈব সার উৎপাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কেঁচো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দরে।
এই বিষয়ে স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অসিত কুমার মন্ডল বলেন, সবজি চাষে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারে প্রাধান্য দিয়ে যদি সবজি উৎপাদন করা হয় একদিকে যেমন সবজিটি বিষমুক্ত বা নিরাপদ থাকে অপরদিকে মাটির গুণাবলি অনেক বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া মোহাম্মদ আলীর ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে শুরু থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। আগামীতে এই ধরনের উদ্যোক্তা তৈরিতে আরও নানা পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।