তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা প্রকৌশলী(এলজিডি) ননী গোপাল দাশের বিরুদ্ধে অফিসে প্রকাশ্যে ধুমপান ও শহরে মদ খেয়ে মাতলামির অভিযোগ উঠেছে।
গত মঙ্গলবার উপজেলা সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় সাগরনাল ইউপি পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুন নূর মাস্টার, জায়ফরনগর ইউপি পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুম রেজা, পূর্বজুড়ী ইউপি পরিষদ চেয়ারম্যান রুয়েল উদ্দিন, গোয়ালবাড়ী ইউপি পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল কাইয়ুম উপজেলা প্রকৌশলী ননী গোপালের প্রকাশ্যে ধুমপানের বিষয়ে অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাগরনাল ইউপির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুন নূর মাস্টার একটি বিশেষ কাজে উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে গেলে তাঁর সামনে কর্তব্যরত প্রকৌশলী ননী গোপাল দাশ প্রকাশ্যে ধুমপান করেন এবং তাঁর দিকে ধোঁয়া ছাড়েন। সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থিত চেয়ারম্যানবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৭ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে জুড়ী উপজেলা প্রকৌশলীর (এলজিডি) ননী গোপাল দাশ নাইট চৌমুহনীতে আসেন। পাশের সিএনজি স্ট্যান্ডের সামনে গিয়ে বেলাগাও গ্রামের সামছু মিয়ার ছেলে সিএনজি চালক দেলোয়ার’কে বলেন উনাকে মদের পাট্রায় নিয়ে যেতে। তখন চালক যেতে অস্বীকৃতি জানালে তার সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সিএনজি চালকের গায়ে হাত তুলেন। এতে চালক দেলোয়ারের পরণে থাকা জ্যাকেট ছিড়ে ফেলেন। এ সময় আশপাশের লোকজন সহ শ্রমিকরা জড়ো হলে হাতাহাতি শুরু হয়। তমধ্যে জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষ সহ সকলে উত্তম মধ্যম হয়। খবর পেয়ে সাইদুল নামে এক ঠিকাদার প্রকৌশলী ননী গোপাল দাশ’কে মোটরসাইকেল যোগে তুলে নিয়ে সটকে পড়েন।
সিএনজি চালক দেলোয়ার বলেন, মঙ্গলবার রাতে প্রকৌশলী ননী গোপাল দাশ মদ্যপ অবস্থায় সিএনজি স্ট্যান্ডে এসে কাপনাপাহাড় মদের পাট্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার সিএনজি ভাড়া করেন। তখন তিনি আমাকে বলেন পাট্রায় গিয়ে মদপান করবেন এবং আসার সময় ২ লিটার মদ নিয়ে আসবেন। তখন আমি তাকে বলি ভাই আমি যেতে পারব না। এতে তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন আমাকে স্যার বলবি! ভাই বললে কেন! আমি জুড়ী উপজেলা প্রকৌশলী। এ কথা বলে আমাকে মারধর শুরু করে জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ট্রাকচালক কামাল হোসেন বলেন, ঘটনার সময় উপজেলা প্রকৌশলী মদ্যপ অবস্থায় সিএনজিচালক দেলোয়ার’কে মারধর করে তার পরণের জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলেন। একজন সরকারি অফিসারের কাছ থেকে এমন আচরণ আশা করা যায় না।
জুড়ী শিশুপার্ক সিএনজি স্ট্যান্ডের সভাপতি বদরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী মদপান করে সিএনজি স্ট্যান্ডে আসেন। সিএনজি চালক দেলোয়ার’কে মদপানের জন্য কাঁপনাপাহাড়ে নিয়ে যেতে বলেন। সে রাজি না হওয়ায় প্রকাশ্যে জনসম্মুখে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করেন। খবর পেয়ে শ্রমিকরা তাকে ঘেরাও করলে সাইদুল নামে এক ঠিকাদার তাকে মোটরসাইকেলে যোগে তুলে নিয়ে চলে যায়।
জুড়ী উপজেলা প্রকৌশলীর (এলজিডি) ননী গোপাল দাশ মুঠোফোনে বলেন, সাগরনাল ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুন নুর মাস্টারের কাছে সে দিনের ঘটনার জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। মদ্যপানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার বাড়ী যশোরে। এখানে কাজ করতে এসেছি। কেন যে মানুষ আমার পিছনে লেগে আছে, আমি জানি না। আমি মানুষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমি সকলের সহযোগিতা চাই। গতদিন জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এজন্য সংবাদ প্রকাশে বিলম্ব।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিনিয়া সুলতানা বলেন, আমি বিয়টি শুনেছি। এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এমন ঘটনা মোটেও কাম্য নয়।