নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ( ডিএসই) তে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের অন্তর্ভুক্ত দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেড। পুঁজিবাজারে নানা অনিয়মের মধ্যে লেনদেন চালাচ্ছে কোম্পানিটি। প্রতিষ্ঠানটির নেই ওয়েবসাবইট, প্রকাশিত হয়না কোন আর্থিক বিবরনী এমনকি কোম্পানিটির কোম্পানি সেক্রেটারিও একাধিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত আছেন।
প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সেক্রেটারি কাজি একরামুল হকের কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড সম্পর্কে কোন ধারনা নেই বল্লেই চলে। তিনি কর্পোরেট সংবাদকে জানান, তিনি একই সাথে দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি হিসেবে এবং কে এন্ড কিউ বাংলাদেশ লিমিটেডের একাউন্টেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড ২০১৮ এর ৩ (১) (সি) ধারায় বলা আছে, কোন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কোম্পানি সচিব, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও হেড অফ ইন্টার্নাল অডিট একই সময়ে অন্য কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে একই পদে বা অন্য কোন পদে নিযুক্ত থাকতে পারবেন না।
এ বিষয়ে কোম্পানি সেক্রেটারি কাজি একরামুল হককে জানালে, তিনি বিএসইসির কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড সম্পর্কে জানেন না বলে জানান।
এ প্রসঙ্গে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মার্কেট অপারেশন বিভাগের প্রধান ওয়াসি আজম কর্পোরেট সংবাদকে বলেন, “সিজিসি অনুযায়ি একই ব্যক্তি কখনই একাধিক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কোম্পানি সচিব, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও হেড অফ ইন্টার্নাল অডিট কিংবা অন্য কোন পদে কর্মরত থাকতে পারেন না”।
ওয়েবসাইট না থাকায় কোম্পানিটি দীর্ঘদিন কোন প্রকার নোটিশ, পিএসই এবং কোন প্রকার আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেনি । যার কারনে কোম্পানিটির বর্তমান আর্থিক অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়নি।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটি ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর সর্বশেষ এজিএম করে। এবং কোম্পানিটির কোন প্রকার লভ্যাংশ প্রদানের তথ্য পাওয়া যায়নি। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধনের পরিমান ৩০ কোটি টাকা। এবং পরিশোধিত মূলধনের পরিমান মাত্র ৭ কোটি টাকা।
ডিএসই তথ্য মতে, বিগত ৫ বছরের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট পর্যবেক্ষনে দেখা যায় দীর্ঘদিনের লসের ধারাবাহিকতায় চলছে কোম্পানিটি । ২০১৭ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লস হয় ৩.৭৫ টাকা, কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য কমেছিলো ২৮.৬৫ টাকা। ২০১৭ সালে কোম্পানিটির সর্বমোট লস হয়েছিলো ২ কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ।
২০১৮ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লস হয় ৪.০৪ টাকা, এসময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য কমেছিলো ৩২.৬৯ টাকা। ২০১৮ সালে কোম্পানিটির সর্বমোট লস হয়েছিলো ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা ।
২০১৯ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লস হয় ২.২৮ টাকা, এসময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য কমেছিলো ৩৪.৯৭ টাকা। ২০১৯ সালে কোম্পানিটির সর্বমোট লস হয়েছিলো ১ কোটি ৭২ লাখ ২০ হাজার টাকা।
২০২০ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লস হয় ২.২৮ টাকা, এসময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য কমেছিলো ৩৬০২৫ টাকা। ২০২০ সালে কোম্পানিটির সর্বমোট লস হয়েছিলো ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা । এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লস হয় ১.৩৭ টাকা, এসময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য কমেছিলো ৩৭.৪২ টাকা। ২০২১ সালে কোম্পানিটির সর্বমোট লস হয়েছিলো ১ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সব কিছু ধোঁয়াসা রেখেই বাজারে লেনদেন চলমান রেখেছে দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেড। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নিরব ভুমিকা, এসব কোম্পানিদের অনিয়মে সাহস জোগাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যার কারনে এতো কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড জারি হলেও মেনে চলছে না এসব প্রতিষ্ঠান। সে কারনেই ঝুঁকি বাড়ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারন বিনিয়োগকারি।
কোম্পানিটির মোট শেয়ারের পরিমান ৭৫ লক্ষ ৫৬ হাজার ৬০০ টি। তারমধ্যে ৩৩.০১ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৪.৯৭ শতাংশ এবং বাকি ৬২.০২ শতাংশ শেয়ার সাধারন বিনিয়োগ কারিদের হাতে।
দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের গত এক বছরে শেয়ার লেনদেন হয় সর্বনিম্ন ৩৮.২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৮৩.২০ টাকায়। কোম্পানিটি ১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে মার্কেটের জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।