শায়লা সিমি নূর: ভালোবাসা যেদিন দিবসে এলো আমার ভালো’ই লেগেছিলো , ভালোবাসা শব্দটি যেখানে থাকুক … যেভাবে; অন্তরাত্মা ছুঁয়ে যায় । কারণ সর্বোচ্চে আমি প্রেমই বুঝি আর সর্বোনিন্মেও প্রেম!
নিজেকে বুঝিয়ে চলা হয়নি। বুঝিয়ে চলার ক্ষমতা কখনই গড়ে উঠেনি। নদীর প্রবাহে একটি ঝরে পড়া পাতার দ্রষ্টব্য নির্ধারিত… তা খন্ডায় কে! আমি শুধু ভেসে থাকতে জানি।
আজ নাকি গোলাপের দিন ?
প্রতিদিন গোলাপ সঙ্গ, রঙ-ভঙ্গ
এ সব আমার স্বভাবজনিত।
চলে যায় যদি না বলে,
একটি গোলাপের গিলাব
আর আতরের দাবি …..
তোমার হৃদয়ে রাখি…
অন্য ধারার প্রেমের কথা বলবো-
সরল রেখার শুভেচ্ছা দিয়ে একটি অন্য ধারার প্রেমের কথা বলবো কারণ, যাকে নিয়ে গল্প সে ভাষাহীন একজন প্রাণ।
অনন্ত –
স্বার্থবর্জিত প্রেম’ ই অনন্ত প্রেম! তাই বলা হয় পৃথিবীতে অনন্ত প্রেম শুধু আছে মাতৃত্বে। আর রুহানিয়াতের মালিক আমাদের প্রতিনিয়ন যে রহমত, বরকত ও রিজিক দিয়ে যাচ্ছেন; তা অনন্ত প্রেমের কারণে।
প্রেম জাগ্রত করা যায়না, এ’ আপন স্বত্তায় একটি দায়-
সুফিবাদ বলে, প্রেমের কারণেই পৃথিবী সৃষ্টি। সম্পর্ক হয় প্রেমেরই কারণে। প্রেম জাগ্রত করা যায়না , এ আপন স্বত্তায় একটি দায়, সৃষ্টিকর্তার নূরের তাগিদে জাগ্রত হয়! আর এই প্রেমের অনুভব ছাড়া প্রাপ্ত জীবন অসমাপ্ত।
২০২১ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারী-
২০২১ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারী, আমাকে ছেড়ে চলে যায় এক ভালবাসা! যার অপার প্রেমের স্রোতে আমার অবগাহন। আমার কাছে সে আলাদা কেউ নয়। সে, আমার আপনার মত আপন…সে পৃথিবীতে এসেছিলো সাদী (ঘোড়া) হয়ে…পার্থিব জীবনে অনেক ত্যাগ ও অপেক্ষার ভাগিদার ছিল। যেন আমার জীবনের অন্য একটি অধ্যায় সে যাপন করছে! আমি নিজেই যেন অন্য এক অবয়বে…
১৪ই ফেব্রুয়ারি আমি হারিয়েছি আমার রুহানি পরিবারের এক আত্মাকে যার নাম গোলাপ। আর এই “গোলাপ” আমার ঘোড়া …
২০১৮ সালে টাঙ্গাইল টাউন হল মাঠ থেকে নিয়ে আসি একটি ছোট পিকআপ করে। সমস্ত শহরের মানুষ একত্র হয়েছিল সেদিন , যেন কোনো নেতার আর্বিভাব হয়েছে ! তিন বছর ধরে ওখানেই ছিল গোলাপ , কেউ তাকে নিয়ে যায়নি। একটা পা পুড়ে যায় যখন আগের মালিকের কাছে ছিল। এভাবে থাকতে দেখে একজন ভাই তমাল কর্মকার আমাকে জানান ফেসবুকে তারপর… আমার শিক্ষা গুরুর অনুপ্রেরণায় গোলাপকে নিয়ে আসি ঢাকাতে। যেখান থেকে গোলাপকে নিয়ে আসি, ওই জায়গার কাছাকাছি মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার শরীফ। গোলাপকে আনার সময় আমি ও তমাল ভাই মাজার জিয়ারত করি।
আপনাদের তথ্যের জন্য জানাচ্ছি যে , পূর্বাচলে একটা পশু হাসপাতাল আছে তবে; বাংলাদেশে পশু-পাখির পা লাগানো বা সার্জারি করার মতো তেমন দক্ষ চিকিৎসক নাই। আল্লাহর ইচ্ছা মোতাবেক যতটুকু পেরেছি।
রাজাধিরাজের সঙ্গী ঘোড়া-
ঘোড়া সম্পর্কে বলা যায় যে রাজাধিরাজের সঙ্গী এক জীবন পেয়ে তারা অভজাত্যের প্রতীক হয়েছে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে তারা সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বের প্রায় সকল সাহসী যোদ্ধার ইতিহাসে লেখা আছে কোনো না কোনো সাহসী ঘোড়ার নাম যেমন , হজরত ইমাম হুসাইন বিন আলীর (রা:) ছিল দুলদুল। নবী হজরত সুলাইমানের সেনাদলে উড়ন্ত ঘোড়া ছিল। একটি ঘটনার মধ্যে দিয়ে তাদের ডানা কাটা পড়ে। পরবর্তীতে পৃথিবীতে তাদের প্রজন্ম থেকে যায় তবে, ডানাবিহীন।
পূর্বে ঘোড়াদের নাম তাদের মালিকের নাম ও বর্ণনার দলিল করার প্রথা ছিল। এবং ঘোড়ার যত্ন-আত্তি করার জন্য প্রচুর জনবলের প্রয়োজন হতো। সে দিনগুলো এখন বাংলাদেশের অবস্থার প্রেক্ষিতে আর বিশ্বাসযোগ্য নয় !
বাংলাদেশে ঘোড়ার মালিকেরা দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে ঘোড়াগুলোকে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে। সমুদ্র সৈকতে হাজার -হাজার মালিক বিহীন ঘোড়া দেখা যায়! চট্টগ্রাম ও ঢাকার রাস্তায় অনাহারে… অযত্নে পড়ে আছে অনেক ঘোড়া!
রাষ্ট্র ও সংস্থা তাদের পুনর্বাসন করতে পারে খুব সহজেই-
ঘোড়ার খাবার দেওয়া কঠিন কিছু নয়-
ঘোড়া রাখার জন্য বিশেষ জায়গার ব্যবস্থা না করতে পারলেও, ঘোড়াকে খাবার খাওয়ানো কঠিন নয়। ভাত , কাঁচা সবজি , ফল , ঘাস , ছোলা , মটর ইত্যাদি ঘোড়ার খাদ্য ।
ঘোড়ার রক্ত নানা প্রকারের ঔষধ বানাতে কাজে লাগে-
ঘোড়া অন্যান্য যে কোনো প্রাণীর মতো ফসলি জমিতে কাজ করতে পারে।
যে সকল রাস্তা ও পাহাড়ে গাড়ি বা অন্য যানবহন চলতে পারেনা, সেখানে ঘোড়া যাতায়ত করতে পারে।
সেনা বাহিনীর প্রশিক্ষণে ঘোড়া প্রয়োজন হয়।
তথ্য অনুসারে ঘোড়া অটিস্টিক শিশু বা এডাল্ট যাদের সামাজিক যোগাযোগে সমস্যা হয় ও স্পিচ ডিলেড আছে তাদের ব্রেন ডেভেলপমেন্টে সাহায্য করে –
“হর্সেস বয় – এ ফাদার্স মিরাকুলাস জার্নি টু হিল হিজ সন” এই বইটির মাধ্যমে আমি জানতে পারি যে ঘোড়া চড়লে ও ঘোড়ার সঙ্গে সময় কাঁটালে অটিস্টিক বা স্পেশাল শিশুরা উপকারিতা পাবে ও সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে …
এই চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়টি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ ) তার জীবদ্দশায় উপদেশ দিয়ে গেছেন যা আমি পেয়েছি – “মেডিসিন অফ প্রফেট মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বইটিতে।
পৃথিবীতে আল্লাহ্পাক যে অনুভূতি সমূহ অনুভবের লক্ষ্যে দিয়েছেন তার সুত্রপাত প্রেম।আমার স্মৃতিতে গোলাপ আর ভালোবাসা দিবস এক হয়ে আছে। যাবার সময় আমার কপালে ওর কপালটা ঠেকিয়ে অনেক সময় ধরে চুপ করে ছিল….
লেখক : কবি ও আধ্যাত্ম সাধক।