January 27, 2025 - 11:01 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeবিশেষ প্রতিবেদনইতিহাসের ভুলে যাওয়া এক নায়ক শামসুল হক

ইতিহাসের ভুলে যাওয়া এক নায়ক শামসুল হক

spot_img

।। এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।। ভুলে যাওয়া আমাদের চরিত্রেরই একটি অংশ। আর এই অংশ হিসাবে আমরা অনেকেই ইচ্ছে করে ভুলে যাই ইতিহাসের অনেক নায়কদের। যারা ইতিহাস রচনা করেন তাদের অধিকাংশই যেন শাসকগোষ্টিকে সন্তুষ্ট করতেই ইতিহাস রচনা করেন। ফলে ইতিহাসের অনেক নায়কই চলে যান ইতিহাসের অন্তরালে। আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে প্রায় বিস্মৃত এমনই একজন হলেন শামসুল হক; যিনি ছিলেন ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’-এর প্রতিষ্ঠাতা বা প্রথম সাধারণ সম্পাদক। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগই ১৯৫৫ সালে ‘আওয়ামী লীগ’-এ রূপান্তরিত হয়। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আওয়ামী লীগের এই প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হয়েও রাজনীতির ইতিহাসের আড়ালেই রয়ে গেছে শামসুল হকের নাম।

১৯৪৭ পরবর্তী রাজনীতিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠক ছিলেন শামসুল হক। বিশেষ করে দেশভাগোত্তর পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাজনৈতিক অভিযাত্রা এবং পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগ সরকারবিরোধী রাজনীতিতে তিনি ছিলেন প্রথম সারির নেতা। ছিলেন পাকিস্তান গণপরিষদের সংসদীয় কমিটির সদস্য। যার জন্ম হয়েছিল টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার এক নিভৃত গ্রাম মাইঠানে ১৯১৮ সালে ১ ফেব্রুয়ারি মামাবাড়িতে। তার পৈতৃক বাড়ি একই উপজেলার টেউরিয়া গ্রামে।

১৯৪৪ সালের ৯ এপ্রিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অন্যতম নেতা পন্ডিত আবুল হাশিম প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগ কর্মী শিবিরের অন্যতম সংগঠক ছিলেন শামসুল হক। এই কর্মী শিবির থেকেই পরবর্তীতে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরে আওয়ামী লীগ) জন্ম লাভ করে। তার নেতৃত্বেই এই কর্মী শিবির ১৯৪৫-৪৬ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগকে জনসাধারণের গণসংগঠনে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তান সৃষ্টিতে শামসুল হকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান অস্বীকার করা সম্ভব নয়।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তৎকালিন নেতৃত্ব অর্থাৎ খাজা নাজিমুদ্দিন, নুরুল আমীন ও ইউসুফ আলি চৌধুরী (ওরফে মোহন মিঞা) গংরা মুসলিম লীগকে তাদের পকেট প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেন। এর প্রতিবিধানের লক্ষে ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে ১৫০ নং মোগলটুলির অফিসে শামসুল হক, কামরুদ্দীন আহমদ, শেখ মুজিবুর রহমান নানা চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও কোন ফলাফর হয় নাই। ফলে তারা নতুন সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন হতে ২৪ জুন ঢাকা রোজ গার্ডেনে মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের বিরোধী রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। মওলানা ভাসানী ছিলেন এই দলের সভাপতি। শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তিতে “আওয়ামী মুসলিম লীগ” নামটি থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।

১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে টাঙ্গাইলের দক্ষিণ মুসলিম কেন্দ্র থেকে মাওলানা ভাসানীর সদস্যপদ বাতিল ঘোষণা এবং উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। এই উপনির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থী ছিলেন করটিয়ার জমিদার খুররম খান পন্নী। শামসুল হক তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করেন এবং বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করেন। এই নির্বাচনে শামসুল হকের পক্ষে নির্বাচনী অভিযান পরিচালনায় ছিলেন কামরুদ্দীন আহমদ, শওকত আলী, আজিজ আহমদ, শামসুদ্দোহা, মুহম্মদ আলমাস, মুহাম্মদ আউয়াল, হযরত আলী প্রমুখ। এদের অধিকাংশই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা। এই নির্বাচনেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগন প্রথম মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ভোট দেয়।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন ‘১৯৪৯ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকে অথবা এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে টাঙ্গাইলে উপনির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। আমরা ঠিক করলাম, শামসুল হক সাহেবকে অনুরোধ করব মুসলিম লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়তে। শামসুল হক সাহেব শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন, কিন্তু টাকা পাওয়া যাবে কোথায়? হক সাহেবেরও টাকা নেই, আর আমাদেরও টাকা নেই। তবু যেই কথা সেই কাজ। শামসুল হক সাহেব টাঙ্গাইলে চলে গেলেন, আমরা যে যা পারি জোগাড় করতে চেষ্টা করলাম। কয়েক শত টাকার বেশি জোগাড় করা সম্ভব হয়ে উঠল না। ছাত্র ও কর্মীরা ঘড়ি, কলম বিক্রি করেও কিছু টাকা দিয়েছিল।’

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ছাত্ররা সারা প্রদেশে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয়। ছাত্রদের সেই আন্দোলনে যে সব নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সেদিন গ্রেফতার হন তাদের মাঝে ছিলেন শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ অন্যতম। এই দিনের সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ছাত্রদের সাথে চুক্তি করেন। চুক্তিপত্রটি সাক্ষরিত হবার আগে সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে শামসুল হক সহ বন্দি ছাত্রনেতাদের চুক্তিপত্রটি দেখিয়ে তাদের সম্মতি নিয়ে আসেন।

১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নবাবপুরে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে ২১ ফেব্রুয়ারির ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে ছিলেন না। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক আমতলায় ছাত্রদের সভার শুরুতে শামসুল হক সেখানে উপস্থিত হন। তিনি ছাত্রদের বোঝাতে চেষ্টা করেন, ঐ মুহূর্তে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে যাবার পরিণতি, যা ভবিষ্যত আন্দোলন ও অন্যান্য কাজের জন্য সুফল বয়ে আনবে না, আনতে পারে না। তাকে সমর্থন দেন খালেক নেওয়াজ খান, কাজী গোলাম মাহবুব ও সলিমুল্লাহ হলের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ছাত্র। কিন্তু ছাত্ররা শামসুল হকের কথা শোনেনি। এরপর গাজীউল হকের সভাপতিত্বে শুরু হয় আমতলার সভা। শামসুল হক তখনও চেষ্টা করেন ; কিন্তু ছাত্ররা সবাই ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে থাকায় শামসুল হকের কথা সেদিন কেউ শোনেনি। ২১ ফেব্রুয়ারির পর সরকার মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন, আবুল হাশিম, মনোরঞ্জন ধর, শামসুল হক সহ কয়েকজনকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করেছিল।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিযোগে শামসুল হক গ্রেফতার হন এবং কারাবরণ করেন। কারাগারে সরকারের অত্যাচারের ফলে ১৯৫৩ সালে অত্যন্ত অসুস্থ শরীর ও মানসিক ব্যাধি নিয়ে কারামুক্তি লাভ করেন। আর সে সময়ই তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার পরের ইতিহাস অত্যন্ত করুণ ও বেদনাদায়ক। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মানসিক ভারসাম্যহীন শামসুল হককে পথে পথে ঘুরতে দেখেছেন অনেকেই। নতুন দল গঠনের জন্য পরিচিত অনেকের কাছে চাঁদাও চেয়েছিলেন তিনি। তারপর হঠাৎ তিনি নিখোঁজ হন। এই নেতার নিখোঁজ নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে রহস্যের সৃষ্টি হয়।

দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিনা চিকিৎসায় তিনি পথে পথে ঘুরেছেন। ১৯৬৪ সালে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান শামসুল হক। পথে পথে ঘুরে রোগ শোকে ভুগতে ভুগতে জীবন নিঃশেষ হয়ে যায় তার। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাকে নিয়ে তৈরি হয় রহস্য। তিনি বেঁচে আছেন না মারা গেছেন তা জানতেন না তার পরিবার এবং দলের লোকজনও। ফলে তাকে নিয়ে দলে বা পারিবারিক পর্যায়ে কোনো শোক বা স্মরণসভা হতে দেখেনি কেউ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইয়ের শুরুর দিকে প্রায়ই উল্লিখিত হয়েছে এ মহৎ রাজনীতিপ্রাণ মানুষটির নাম। অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে বঙ্গবন্ধু বারবার স্মরণ করেছেন শামসুল হককে। বায়ান্নর উত্তাল সময়ে রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ সময় তাকে কাটাতে হয়েছে জেলের অভ্যন্তরে। সেই সময় শামসুল হকের অনুপস্থিতি অনুভব করেছেন বঙ্গবন্ধু। লেখায় শামসুল হককে নিয়ে প্রতি মুহূর্তের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন বঙ্গবন্ধু।

তার মৃত্যুর প্রায় ৪২ বছর পর ২০০৭ সালে শামসুল হক গবেষণা পরিষদ টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কদিম হামজানিতে তার কবর আবিষ্কার করে। ডা. আনসার আলী তালুকদার নামের একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ২০০৭ সালে টাঙ্গাইল শহরের ব্যাপারীপাড়ায় মেয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে উদ্ঘাটন করেন শামসুল হকের মৃত্যুরহস্য। তার বরাতেই জানা যায়, সেখানে এক বাড়িতে রঙিন একটি ক্যালেন্ডারে শামসুল হকের ছবি দেখতে পান তিনি। ক্যালেন্ডারে শামসুল হকের ছবির পাশে বাংলা হরফে লেখা ছিল ‘আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও ভাষা আন্দোলনের রূপকার’। ছবিটি দেখে ডা. আনসার আলীর ৪২ বছর আগের কথা মনে পড়ে যায়। ডা. আনসার আলী তালুকদার নিজেও তৎকালীন মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। রাজনীতি করার সুবাদে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন ও জানতেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে শামসুল হকের ভাষণও শুনেছেন। এরপর তিনি বিষয়টি নিয়ে এলাকার প্রবীণ লোকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি জানালে ৪২ বছর পর শামসুল হকের মৃত্যু সম্পর্কে জানতে পারে দেশের জনগন।

শামসুল হক গবেষণা পরিষদের মাধ্যমেই দেশবাসী জানতে পারে, ১৯৬৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে জোকারচর প্রামের মহিউদ্দিন আনসারী নামের এক নামকরা কংগ্রেস নেতা কলকাতা থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার পথে কোনো এক স্থানে মানসিক ভারাসম্যহীন ও ভয়াবহ অসুস্থ অবস্থায় শামসুল হককে দেখতে পেয়ে তিনি বাড়িতে নিয়ে আসেন। সে সময় গ্রামের হাতেগোনা কয়েকজন সচেতন ও শিক্ষিত লোক ছাড়া শামসুল হককে কেউ চিনতেন না। অসুস্থ শামসুল হক মহিউদ্দিন আনসারীর বাড়িতে ৭ দিন থাকার পর জ্বরে ভুগে ১৯৬৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। স্থানীয় হোমিও চিকিৎসক শুকলাল দাস শামসুল হকের চিকিৎসা করেন। তিনি যেদিন মারা যান সেদিন ছিল শনিবার ওই এলাকার হাটবার। হাটে গইজা খলিফার দোকান থেকে ডা. আনসার আলী ও কংগ্রেস নেতা মহিউদ্দিন আনসারীর মেজো ছেলে রইসউদ্দিন আনসারী কাফনের কাপড় কিনে আনেন। মহিউদ্দিন আনসারীর বাড়ির সামনের ছোট মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শামসুল হককে কদিমহামজানি কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ডা. আনসার আলী মনে করেন, মহিউদ্দিন আনসারী ছিলেন নামকরা একজন কংগ্রেস নেতা। অপরদিকে শামসুল হক ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী রাজনীতি করলেও তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ছিল। একজন কংগ্রেস নেতার বাড়িতে শামসুল হক মারা যাওয়ার ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক কলহ ও দ্বন্দের সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা করেই শামসুল হকের মৃত্যুর ঘটনা গোপন রাখা হয়। এরপর এক সময় বিষয়টি সবাই ভুলে যায়।

বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই রাজনীতিবিদের কথা পাওয়া যায় আবু জাফর শামসুদ্দীনের ‘আত্মস্মৃতি : সংগ্রাম ও জয়’ বইতে। আবু জাফর শামসুদ্দীন লিখেছেন, “১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তাকে (শামসুল হককে) আটক করা হয়। তখন তিনি বিবাহিত, একটি কন্যা সন্তানের পিতা। স্ত্রী নরসিংদী জেলার সেকান্দার মাস্টার সাহেবের কন্যা আফিয়া খাতুন এম.এ কলেজের লেকচারার। জেলখানায় শামসুল হকের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। নিজ পরিবারের প্রতি তাঁর মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। আফিয়া খাতুন তাঁকে ত্যাগ করেন। আফিয়া এখন পাকিস্তানে মিসেস আফিয়া দিল। শামসুল হক সম্পূর্ণ বিকৃত মস্তিষ্ক অবস্থায় জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শামসুল হকের চিকিৎসায় আওয়ামী মুসলিম লীগ কোনো উদ্যোগ নিয়েছিল বলেও মনে পড়ে না। শামসুল হক ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন- কখনও বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে টাকা ধার চাইতেন, কেউ সমাদর করলে আহার করতেন। টাঙ্গাইলের ওয়াটারলু বিজয়ী শামসুল হকের মৃত্যু কোথায় কি অবস্থায় হলো তার কোনো বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে দেখিনি। শোকসভাও করেনি কোনো রাজনৈতিক দল বা অন্যরা। অথচ এই শামসুল হক একদিন ছিলেন বাংলার তরুণ মুসলিম ছাত্রসমাজের প্রিয় নেতা- ১৯৫২ সালেও ভাষাসংগ্রামী এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।”

শামসুল হকের কথা এখনও অনেকেই জানেন না। যে দল তিনি গড়েছিলেন, যে দলে তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ওই দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও তাকে ভুলতে বসেছিলো। ঘটা করে কেউ শামসুল হকের জন্মদিন বা মৃত্যুদিনও পালন করে না। শামসুল হকের প্রথম জীবনে যতই বর্ণাঢ্য ও আলোকোজ্জ্বল হোক না কেন, শামসুল হকের শেষ জীবন ছিল কষ্টের ও মর্মান্তিক।

এমন একদিন অবশ্যই আসবে যখন কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন আবেগ-কল্পনা-পুর্বনির্ধারিত ধারণা-দলীয় বা গোষ্ঠীগত দৃষ্টিভঙ্গি ও আচ্ছন্নতা- নেতা বা দলের প্রতি অন্ধভক্তিবাদ-আত্মমহিমার মোহ ইত্যাদির উর্দ্ধে উঠে নিরংকুশ সত্যের আলোকে প্রামান্য ইতিহাস লিখতে। নিশ্চিত যে ইতিহাস আবার পর্যালোচিত হবে। যার যা প্র্যাপ্য তাকে তা দেয়া হবে।

শামসুল হকের ১০৫তম জন্মবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা।

[ লেখক : রাজনীতিক ও কলাম লেখক, মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও আহ্বায়ক, জাতীয় কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন ]

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

প্রথম ধাপে মালয়েশিয়া যেতে পারবেন ৭ হাজার ৯৬৪ জন

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: গত বছর বাংলাদেশের প্রায় ১৮ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তারা আটকে যান। তবে তাদের মধ্যে ৭ হাজার...

বগুড়ায় ডাকাতি প্রস্তুতিকালে গ্রেপ্তার ১

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার আদমদীঘিতে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে পিয়াস মন্ডল (৩১) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তার কাছে থেকে ডাকাতির প্রস্তুতির সরঞ্জাম রশি, চাপাতি,...

যারা ক্ষমতামুখি হয়েছেন, তাদেরকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে: চুয়াডাঙ্গায় হাসনাত আব্দুল্লাহ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, 'কাদের কাদের আওয়ামী লীগের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিলো আমাদের জানা আছে। কেউ কেউ...

আমাকে দেখলে তো ৩০ বছরেরই মনে হয়: শাহরুখ খান

বিনোদন ডেস্ক: জন্ম ১৯৬৫ সালে। অর্থাৎ, এ বছর শেষ হওয়ার আগেই ৬০ বছরে পা দিবেন বলিউডের বাদশাহ শাহরুখ খান। ভারতে চিহ্নিত হবেন প্রবীণ নাগরিক...

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ব্যবসায়ী কারাগারে

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার ধুনট উপজেলায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে রকিবুল হাসান রকি তালুকদার (২৮) নামে এক ব্যবসায়ীকে সোমবার (২৭ জানুয়ারি)...

স্মার্ট ও স্বাস্থ্যকর রান্নার সমাধানে বাজারে এলো স্যামসাংয়ের ৬টি মাইক্রোওয়েভ ওভেন

কর্পোরেট ডেস্ক: বেকিং, গ্রিল সহ নানা স্টাইলের রান্না নিয়ে শৌখিন হতে এখন আর বাধা নেই, কারণ স্যামসাং সম্প্রতি বাজারে নিয়ে এসেছে তাদের সবচেয়ে আধুনিক...

টানা দ্বিতীয় বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয় সিনারের

স্পোর্টস ডেস্ক : আলেক্সান্দার জেভরেভকে হতাশ করে টানা দ্বিতীয় বারের মোত অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জিতেছেন ইয়ানিক সিনার। ২৩ বছর এই ইতালিয়ান রড লেভার এরেনায়...