নিজস্ব প্রতিবেদক : ফ্ল্যাটের ভুয়া দলিল দেখিয়ে ৫০ কোটি টাকা লোন নিয়ে আত্মসাতকারী চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শনিবার (৪ মে) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগের সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট গোপন সূত্রে জানতে পারে, একটি সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও টিন তৈরি করছে। এই এনআইডি ও টিন ব্যবহার করে চক্রের সদস্যরা ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের অসাধু লোকদের মাধ্যমে চক্রের সদস্যদের নামে ফ্ল্যাট/জমির একাধিক মূল দলিল তৈরি করতো। পরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব জাল দলিল দিয়ে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মর্টগেজ রেখে একটি ফ্ল্যাটের বিপরীতে একাধিক লোন গ্রহণের মাধ্যমে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
সিআইডি প্রধান বলেন, এ সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের হোতা জয়নাল আবেদীন ইদ্রিস। তার চক্রের সদস্যরা রাজধানী অভিজাত এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের ক্রেতা হিসেবে হাজির হন। ফ্ল্যাট কেনার জন্য শুরুতে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট বায়না করেন। এরপর ফ্ল্যাটের মালিকানার তথ্য যাচাইয়ের কথা বলে মালিকের কাছ থেকে দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্রের কপি সংগ্রহ করেন। ফ্ল্যাটের মালিকের কাছ থেকে নেওয়া দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্রের তথ্য নিয়ে ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের অসাধু লোকদের মাধ্যমে তৈরি করেন জাল দলিল। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল দলিল দেখিয়ে ক্রেতার নামে ব্যাংক ঋণ নিয়ে সেই টাকাও আত্মসাৎ করেন। এভাবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ফ্ল্যাটের দলিল দিয়ে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ৫০ কোটি টাকা।
অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া আরও বলেন, সিআইডির অনুসন্ধানে ফ্ল্যাট জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে জয়নাল আবেদীন ইদ্রিসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রুমানা জুয়েলার্স, নীড় এস্টেট প্রোপার্টিস লিমিটেড, স্নেহা এন্টারপ্রাইজ, ই আর ইন্টারন্যাশনালসহ চক্রের ২৫ জন সদস্যের বিরুদ্ধে ডিএমপির উত্তরা-পূর্ব থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করে সিআইডি। এ মামলায় মোট ১১জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চক্রের মাস্টারমাইন্ড জয়নাল আবেদীন রাজধানীর মিরপুরে কো-অপারেটিভ মার্কেটের একটি স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। পরে জয়নাল ও শহিদুল ইসলাম সবুজ মিলে ফ্ল্যাট জালিয়াতি শুরু করেন। চক্রের সাথে জড়িত হয়ে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন জয়নাল। তার অন্যতম প্রধান সহযোগী দুই স্ত্রী রোমানা সিদ্দিক ও রাবেয়া আক্তার মুক্তা। প্রতারণার জন্য নিজ নামে ছয়টি ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করেন। জয়নাল ফ্ল্যাটের মালিকানার দলিলের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছে শত কোটি টাকা। এ অবৈধ অর্থে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৭ তলা বাড়ি, ৩টি ফ্ল্যাট, মিরপুর ও আশকোনায় ৩টি ফ্ল্যাট কিনেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- চক্রের মাস্টারমাইন্ড জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস, তার প্রধান সহযোগী মো. রাকিব হোসেন (৩৩), চক্রের সদস্য জয়নালের ভায়রা ভাই কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (৫৪), জাল কাগজপত্র ও ভুয়া এনআইডি প্রস্তুতকারক মো. লিটন মাহমুদ (৪০), ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল প্রস্তুতকারক হাবিবুর রহমান মিঠু (৩০), এনআরবিসির ব্যাংক কর্মকর্তা হিরু মোল্যা (৪৪), আব্দুস সাত্তার (৫৪) ও সৈয়দ তারেক আলী (৫৪)।
তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিলমোহর, একই ব্যক্তির একাধিক ভুয়া এনআইডি ও টিন নম্বর, ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডসহ নগদ ৩ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে।