তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: বিড়ম্বনা শবে মাত্র শুরু পিংকু বিশ্বাস! মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি ২০২০ সালে নতুন ভোটার তালিকায় নাম লেখান। ঐ বছরেই স্মার্ট এনআইডি কার্ড হাতে পান। কিন্তু স্মার্ট কার্ড হাতে পেয়েই বিস্মিত হন তিনি। কারণ স্মার্ট কার্ডে তার ছবির পাশে নামের জায়গায় মনি রানী বিশ্বাস লেখা। এমনকি মা-বাবার নামও সব কিছুই ভিন্ন।
স্থানীয় নির্বাচন অফিসের লোকজন পিংকু বিশ্বাসের হাতে যে স্মার্ট এনআইডি কার্ড (নম্বর ৬৯১২২৭৯৩৭৬) হস্তান্তর করে তাতে ‘পিংকু বিশ্বাসের ছবি ও স্বাক্ষর ব্যতীত সব তথ্য মনি রানী বিশ্বাস (যার পৃথক এনআইডি নম্বর ৩৭৬২১১৮৬১৪) নামে এক নারী ভোটারের। তাৎক্ষণিক পিংকু বিশ্বাস বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রতিবাদ করেন এবং এর সমাধান চান। কিন্তু নির্বাচন অফিসের লোকজন সংশোধন করে দেওয়ার আশ্বাসে ভুল এনআইডি কার্ডটিই গ্রহণ করেন।
এখন ভুলে ভরা এই স্মার্ট কার্ড নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন পিংকু বিশ্বাস ও তার পরিবার। প্রয়োজনীয় কোনো কাজেই ব্যবহার করতে পারচ্ছেন না এনআইডি কার্ড। উল্টো প্রতিনিয়ত নানা হয়রানি, বিড়ম্বনা ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। পড়াশোনা ও বন্ধ হয়ে গেছে।
এমন বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতে প্রায় তিনটি বছর আগে তথ্য সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেন পিংকু বিশ্বাস। তবে উল্টো তার ভোগান্তির সীমারেখা অতিক্রম করেছে। সংশোধন করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও গত প্রায় তিন বছর ধরে স্থানীয় বড়লেখা উপজেলা নির্বাচন অফিস, মৌলভীবাজার জেলা নির্বাচন অফিস, সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন এনআইডি নামক কার্ডটি শুধু সংশোধনের জন্য । কিন্তু স্মার্ট কার্ড সংশোধন হয়নি। সব শেষ চলতি বছরের ৪ঠা মার্চ সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হালিম খান পিংকু বিশ্বাসের আবেদনটি জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বরাবর পাঠান। পাশাপাশি সহকারী পরিচালকের (সংশোধন ও প্রতিস্থাপন) দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি পাঠান। এরপর সংশোধনের জন্য শুনানিতে অংশ নিতে পিংকু বিশ্বাস ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে তিন বার আসেন। কিন্তু কোনোবারই আর শুনানি হয়নি।
ইসি সচিবালয়ে পিংকু বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘সংশোধনের আবেদনের পর নির্বাচন অফিস সংশ্লিষ্টরা যে সমস্ত কাগজ চেয়েছেন, সব দিয়েছি। আদালতের মাধ্যমে এফিডেভিট, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একের পর এক প্রত্যয়ন পত্র । তবুও সংশোধন হয়নি। বড়লেখা-মৌলভীবাজার-সিলেট অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। গত প্রায় তিনটি বছরে সংশোধনের নামে ঘুরতে ঘুরতে প্রয়োজনীয় কাজ ও যাতায়াত বাবত প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো খরচা হয়ে গেছে। জানি না, আর কত পরীক্ষা দিলে এনআইডি কার্ডের সংশোধন হবে।’
শুধু পিংকু বিশ্বাসই নয়, এমন অভিযোগ স্মার্ট এনআইডি কার্ড পাওয়া অসংখ্য মানুষের। তারা বলছেন, আগের এনআইডি কার্ডে ঠিক থাকলেও নাম, পিতার নাম কিংবা ঠিকানায় ভুল মিলছে স্মার্ট কার্ডে। আবার অনেকেই নিয়ম মেনে সংশোধন করার পরও আগের ভুলই থেকে যাচ্ছে তাদের স্মার্ট কার্ডে। এতে ভোগান্তি আরো বাড়ছে সেবা গ্রহীতাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব ও এনআইডির মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। এইমাত্র আমি জানলাম।’ দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করে জানান।