আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন জেসিন্ডা আরডার্ন। দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এখন আর তার যথেষ্ট ‘সক্ষমতা’ নেই উল্লেখ করে আগামী মাসে পদত্যাগ করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) নিজেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন জেসিন্ডা আরডার্ন।
তিনি বলেন, আমার জন্য এটিই সময়। আরও চার বছরের জন্য আমার ভান্ডারে যথেষ্ট কিছু নেই।
পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর জেসিন্ডা আরডার্ন (৪২) জানান, তিনি গ্রীষ্মের ছুটিতে তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করেছিলাম এই সময়টা জুড়ে সামনে এগিয়ে যেতে আমার কী দরকার তা আমি খুঁজে পাবো, তবে দুঃখজনকভাবে আমি তা পাইনি, আর এই পদে থেকে কাজ করে যাওয়াটা নিউজিল্যান্ডের জন্য কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না।’
২০১৭ সালে ৩৭ বছর বয়সে জেসিন্ডা যখন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন সে সময়টাতে তিনিই ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সি নারী সরকার প্রধান। এর এক বছর পর বিশ্বের দ্বিতীয় নেত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মা হন তিনি। এর তিন বছর পর নির্বাচনে তার মধ্য-বামপন্থী লেবার পার্টি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। সাম্প্রতিক ভোটে তার দল ও ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে।
এক মাস আগে পার্লামেন্টের গ্রীষ্মকালীন অবকাশের পর প্রথমবার জনসমক্ষে আসেন আরডার্ন। তিনি লেবার পার্টির সাংগঠনিক কমিটির বার্ষিক সভায় বলেন, ছুটিতে থাকাকালে নেতৃত্ব চালিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তি ফিরে পাবেন বলে আশা করেছিলেন, ‘কিন্তু আমি তা করতে পারিনি’।
আরডার্ন বলেন, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আগামী ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত একজন নির্বাচিত এমপি হিসেবে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, পরবর্তী নির্বাচনে আমরা জিততে পারব না বলে আমি ছেড়ে যাচ্ছি না, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমরা পারব এবং করব।
আরডার্ন বলেন, তার পদত্যাগ ৭ ফেব্রুয়ারির পরে কার্যকর হবে এবং ২২ জানুয়ারি লেবার পার্টির সভায় ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতাকে বেছে নেওয়া হবে।
উপপ্রধানমন্ত্রী গ্রান্ট রবার্টসন জানান, তিনি তার নাম প্রস্তাব করবেন না।
পদত্যাগের পেছনে কোনো রহস্য নেই জানিয়ে আরডার্ন বলেন, আমি একজন মানুষ। আমরা যতদিন পারি ততদিন দিই এবং তারপরে (একদিন) সময় হয়। আমার জন্য, এটিই সময়।
তিনি বলেন, আমি চলে যাচ্ছি। কারণ, এই ধরনের বিশেষ সুবিধাযুক্ত চাকরির সঙ্গে বড় দায়িত্ব থাকে। আপনি কখন নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত এবং কখন নন, তা জানাটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
কোভিড অতিমারি, ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে বন্দুক হামলা ও হোয়াইট আইল্যান্ড আগ্নেয়গিরির উদগীরনের সময়টা জুড়ে তিনি নিউজিল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জেসিন্ডা বলেন, ‘শান্তির সময় দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া এক রকম আর সংকটময় সময় জুড়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়াটা সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম।’
সাম্প্রতিক সময়ের জরিপগুলোতে দেখা যায় তার জনপ্রিয়তা কমে গেছে। তবে নির্বাচনে লেবার পার্টি জয় লাভ করতে পারবে না এমন ধারণা থেকে তিনি পদত্যাগ করছেন না বলে জানিয়েছেন। জেসিন্ডা বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এক দল নতুন মানুষকে কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিতে হবে।’
সূত্র : এএফপি, এনডিটিভি, বিবিসি।