কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের আওয়ামীসুলভ বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অনুভূতিতে আঘাত করেছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। পাশাপাশি দলটি বলছে, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্ঞান ও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক স্বার্থের ভিত্তিতে। বিএনপি বিশ্বাস করে, দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধনেই দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক সাফল্য নিহিত। তাই বিএনপি রাশিয়াকে আহ্বান করছে, বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায় ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তথা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতার সংকল্প ও মহান আত্মত্যাগের প্রতি উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনের জন্য।
আজ শুক্রবার সকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিবৃতিতে এসব কথা বলে দলটি।
বিএনপি বলছে, ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে বিএনপির বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বলে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সরকারকে নির্বাচিত করেছে এবং ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে, যাদের অধিকাংশ ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। তার এই অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও আওয়ামীসুলভ বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বলয়ের বাইরের সব বাংলাদেশি নাগরিক আজ, নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতা হারিয়ে, নিজ দেশে পরাধীন। গত ১৫ বছর ধরে, গণবিদ্বেষী সরকার যে দুর্নীতি—দুঃশাসন ও দমন-দুর্বৃত্তায়ন চালিয়েছে, সমাজের প্রতিটি শ্রেণি ও পেশার মানুষ তাতে বৈষম্য, অবিচার ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
‘এটি প্রমাণিত যে, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রহসনমূলক ডামি নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল না। বরং নির্বাচনের নামে এটি ছিল জাতির সঙ্গে একটি সহিংস প্রতারণা’
বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়নি বলে অন্য পর্যবেক্ষকদের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সহমত পোষণ করে যুক্তরাষ্ট্র। হাজারো বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন নানা ধরনের অনিয়মের খবরে উদ্বেগের পাশাপাশি নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করতে না পারায় তারা হতাশা ব্যক্ত করে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য বিবৃতি দেয়, গণতান্ত্রিক নির্বাচন যে বিশ্বাসযোগ্য, মুক্ত ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ওপর নির্ভর করে, বাংলাদেশে তার কোনো মানদণ্ড মানা হয়নি। নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের ভোট দেওয়ার জন্য বিকল্প ছিল না বলেও তারা অভিমত ব্যক্ত করে।
দলটি বলছে, একই ধারাবাহিকতায় কানাডা হতাশা ব্যক্ত করে যে, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূলনীতি থেকে ছিটকে পড়েছে, যার ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একটি কার্যকর বিরোধী দল, স্বাধীন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা শক্তিশালী এবং সুস্থ গণতন্ত্র নিশ্চিত করার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানায় তারা। অন্যদিকে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে অস্ট্রেলিয়া বলে, এটি দুঃখজনক যে, নির্বাচন এমন একটি পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দলসমূহ অর্থবহ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশে অংশ নিতে পারেনি। তারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানায়, যেন তা মানবাধিকার সুরক্ষা, আইনের শাসন এবং উন্নয়নের প্রচারকে সমর্থন করে।