October 9, 2024 - 2:23 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট-অর্থ ও বাণিজ্যঅর্থ-বাণিজ্যকক্সবাজারে ২ হাজার টন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

কক্সবাজারে ২ হাজার টন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

spot_img

মোহাম্মদ রিদুয়ান হাফিজ, কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলাজুড়ে প্রতিবছর জমিতে আবাদ হয় আউশ, আমন ও বোরোর। এই তিন ফসল ঘরে তোলার বাইরেও বোরো আবাদের আগে ৭০ থেকে ৮০ দিন জমিগুলো খালি পড়ে থাকে। সেই স্বল্প সময়কেও কাজে লাগানো হয়েছে সরিষা উৎপাদনে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, প্রতিবছর তিন ফসলি জমিকে চার ফসলি জমিতে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে সরিষার আবাদ করে প্রান্তিক চাষিরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছে। এতে ভোজ্য তেলের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে সরিষার আবাদের মধ্য দিয়ে। এবার কক্সবাজারের ৮টি উপজেলায় ২ হাজার টনের বেশি সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নেমেছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এসব উপজেলার ৩২০০ চাষিকে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে বীজ ও সার, সেইসাথে নানা পরামর্শ। অনেক চাষি নিজেদের উদ্যোগেও এই আবাদ করেছেন।

চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ১৫৭৩ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২৫ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিলো ১২০৩ হেক্টর জমিতে। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪৮ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে এবার। এরমধ্যে চকরিয়ায় ৫০০ হেক্টর, পেকুয়ায় ৩৫০ হেক্টর, রামুতে ২০০ হেক্টর, সদরে ২০০ হেক্টর, উখিয়ায় ৬০ হেক্টর, টেকনাফে ১৭৫ হেক্টর, মহেশখালীতে ৬০ হেক্টর এবং কুতুবদিয়ায় ২৮ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়।

বিভিন্ন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলাজুড়ে ২০০০ টনেরও বেশি সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চলতি বছর বেড়েছে সরিষা আবাদে জমির পরিমাণ। প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে বেশি জমিতে এবারও সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অনান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর সরিষার সর্বোচ্চ ফলন পেতে যাচ্ছে কক্সবাজার জেলা। বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণের কাছাকাছি সরিষার আবাদ বাড়ায় ভোক্তা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের চাহিদাও মেটাবে এই সরিষা। অনাবাদি পড়ে থাকা জমিগুলোকেও এবার সরিষা আবাদের আওতায় নেওয়া হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলাজুড়ে দিগন্তজোড়া জমিতে সরিষার হলুদাভ রং ও ফুলের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে পুরো এলাকা।

মাঠপর্যায়ে কর্মরত চকরিয়া কৃষি বিভাগের উপ–সহকারী কর্মকর্তা রাজীব দে বলেন, প্রতিবছর জমিতে আউশ, আমন ও বোরোসহ তিনবার ফসল উৎপাদন করা যায়। তবে বোরো চাষ শুরু করার আগে জমি খিল পড়ে থাকে আনুমানিক ৭০ থেকে ৮০ দিন। তাছাড়া অনাবাদি পড়ে থাকা অনেক জমিকেও সরিষার উৎপাদনে কাজে লাগানো হয়েছে। এতে কম খরচে, কম পরিশ্রমে অধিক ফসল গোলায় তুলতে পারছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। তিনি জানান, প্রতি একর জমিতে সরিষা উৎপাদনে খরচ পড়ে ৩৬ হাজার ৭২৫ টাকা। সরিষা উৎপাদনের পর খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের নিট লাভ হয় ২০ হাজার টাকার বেশি। এতে দিন দিন সরিষার আবাদের দিকেও ঝুঁকছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের কৃষক মো. নূর উদ্দীন বলেন, দুই কানি জমিতে তিন ফসল আবাদের পর সরিষার আবাদ শুরু করি। এতে খরচ পড়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে সরিষার দামও ভাল পাওয়া যাচ্ছে। এতে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হয়ে এবারও একই পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে বীজ ও সার পেয়েছি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে। তাছাড়া জমিতে কোন ধরনের সেচও দিতে হয় না। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাও নানান পরামর্শ দেওয়ায় আশা করছি এবারও বাম্পার ফলন হবে সরিষার।

প্রান্তিক কৃষকেরা বলছেন, সরিষা তেলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সরিষার দাম এখন বেশ ভালো। বাজার পরিস্থিতি যদি স্থিতিশীল থাকে, তাহলে এবারও উৎপাদিত সরিষা বিক্রি করে বেশ লাভের মুখ দেখবেন তারা। সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রার অর্জন নিয়ে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে কৃষক তার জমিতে উন্নত জাতের সরিষার চাষ করেছেন। তন্মধ্যে বেশ জনপ্রিয় জাত হচ্ছে বারি সরিষা–১৪, এর পর বারি সরিষা–১১ ও বিনা সরিষা–৯। এই সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সার, বীজ ও নগদ টাকা। এতে প্রান্তিক কৃষকেরা এবারও বেশ লাভের মুখ দেখবে সরিষা আবাদে।

জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক মো কবির হেসেন বলেন, মূলত আমাদের জমিগুলো তিন ফসলা জমি। তন্মধ্যে আমনের ফসল মাঠ থেকে গোলায় তোলার পর প্রায় ৮০দিন খালি পড়ে থাকে। সেই সময়কে সরিষা চাষে কাজে লাগানোর জন্য মাঠপর্যায়ের প্রান্তিক কৃষককে উদ্বুদ্ধ করাসহ সরকারিভাবে প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ