November 22, 2024 - 4:06 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeনির্বাচিত কলামফ্রা লুকা প্যাসিওলি’র ’সুম্মা ডি এ্যারিথমেটিকা জিওমেট্রিকা প্রপোর্শনি এট প্রপোর্শনালিটা’ থেকে পার্টিকুলারিস...

ফ্রা লুকা প্যাসিওলি’র ’সুম্মা ডি এ্যারিথমেটিকা জিওমেট্রিকা প্রপোর্শনি এট প্রপোর্শনালিটা’ থেকে পার্টিকুলারিস ডি কম্পিউটিস এট স্ক্রিপচার্স (এ্যাকাউন্টিং বুকস্ এ্যান্ড রেকর্ডস) এর অধ্যাপক জেরেমি ক্রিপসকৃত ইংরেজি অনুবাদ থেকে বঙ্গানুবাদ

spot_img

(১) বাংলা অনুবাদকের ভূমিকা

এন জি চক্রবর্তী।। ’বুক কিপিং’ এর সাথে আমার প্রথম পরিচয় ও প্রেম ১৯৬৮ সালে। তখন আমি আইকম প্রথমবর্ষের ছাত্র। যশোরের শিক্ষক রহমান সাহেবের সেই উক্তি ’মূলধন আমার নিজের হলিও ধরি নিতি হোবি ওটা ব্যবসার, আমার নয়। আর কোম্পানি হলে তো কথাই নেই। আইনই বলে দিয়েছে ’মূলধন’ এর ব্যাপারে ’তার মালিক’ আর কোম্পানি পৃথক। সে হিসাবেই ক্যাপিটাল ক্রেডিট হয়। অর্থাৎ আমি আর আমার ব্যবসা বা কোম্পানি পৃথক।’ প্রসংঙ্গক্রমে বলে নেয়া দরকার যে, এখনকার ’সমীকরণ’ এর বদলে তখন ছিল ’গোল্ডেন রুলস’এর যুগ।

মাথায় কি রকম খটকা লাগে। ’ধরে নিতে হবে’ কেন? জিনিসটা মনের মধ্যে খচখচ করতে থাকে। বই এ লেখা হিসাববিদ্যা একটি বিজ্ঞান। সেখানে আাবার ধরাধরি কেন? আবার কোম্পানি’র বেলায় আইনই বলে দিল ও দুটো আলাদা। কার মাথা থেকে এগুলো প্রথম বেরিয়েছিল? রহমান স্যার বল্লেন, এই যে ডেবিট ক্রেডিট এটাই ডাবল এন্ট্রি। মানে একই লেনদেনের দুটি হিসাব, বাংলায় একটি লেন অন্যটি দেন। এটার জনক হচ্ছে ’লুকা প্যাসিওলি’। নামটি প্রথম তাঁর মুখ থেকেই শোনা। পরে বইতেও নামটি দেখেছি। আর কোম্পানি আইনের জনক যাকে বলা হয় তিনি হচ্ছেন ’রবার্ট লো’। সেটা অবশ্য অনেক পরে জেনেছি।

১৪৯৪ সনে প্রকাশিত ’সুম্মা ডি এ্যারিথমেটিকা জিওমেট্রিকা প্রপোর্শনি এট প্রপোর্শনালিটা’ এর একটি অংশ হলো ডাবল এন্ট্রি সিষ্টেমের উপর লেখা ফ্রা লুকা প্যাসিওলি’র ’পার্টিকুলারিস ডি কম্পিউটিস এট স্ক্রিপচার্স’ (এ্যাকাউন্টিং বুকস্ এ্যান্ড রেকর্ডস)। ওহাইওর হাইডেলবার্গ কলেজের অধ্যাপক জেরেমি ক্রিপস এ অংশটির ইংরেজি অনুবাদ করেন। সিয়াটল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত দি প্যাসিওলি সোসাইটির ডেভিড ই টিনিয়াস ও উইলিয়াম এল ওয়েস ১৯৯৪ সনে সে অনুবাদটি প্রকাশ করেন। যার পিডিএফ কপি আমি গুগলে’র কল্যানে পেয়ে যাই। পড়ে ভালো লাগে। তারপরই সিদ্ধান্ত নিই ওটা বাংলায় অনুবাদ করার। কিন্তু সমস্যা হলো অনুবাদের আইনগত অনুমতির। তার জন্য সিয়াটল বিশ্ববিদ্যালয়ের কালেকশন ডেভলপমেন্ট বিভাগের স্পেশাল কালেকশনস এন্ড আর্কাইভস এর কোঅর্ডিনেটর মেরী লিন্ডেন সেপালভেডা, এমএল এর কাছে পাঠানো মেইলে বাংলায় অনুবাদ ও তা প্রকাশের অনুরোধ জানাই। জবাবে তিনি জানান যে তাঁর ধারণা বইটি সবার জন্য উন্মুক্ত। আমার প্রতি সদয় হয়ে তিনি তাঁর মেইলের অনুলিপি দি প্যাসিওলি সোসাইটির ডেভিড ই. টিনিয়াস ও সিয়াটল বিশ্ববিদ্যালেেয়র লিগাল কাউন্সেলকে এ বিষয়ে আমাকে সাহায্য করার অনুরোধ জানান। কিন্তু তাঁদের কারো কাছ থেকে কোন সাড়া পাইনি। এ ব্যাপারে আমার বড় ছেলে ড: সজীব চক্রবর্তী’র সহায়তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।

আরো আশংকা ছিল চ্যাট জিপিটি’র কল্যানে আদৌ এ বাংলা অনুবাদ প্রয়োজনীয় কিনা। পরে মনে হলো রক্তমাংসের মানুষের অনুভুতির সংগে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা যন্ত্রের এখনো বোধহয় হয়নি।

লুকা’র বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, ব্যবসায়ীদের প্রতি তাঁর ছিলো অসীম শ্রদ্ধা, তাঁদের সহায়তা করার ইচ্ছা আর উদ্দেশ্য ছিল সমাজের উন্নতি। সামান্য জিনিসকেও তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। রাস্তার যাঁরা ফেরিওয়ালা তাঁদের প্রতিও তাঁর ছিলো দরদ ভালবাসা। আর তাই তিনি সেই ফেরিওয়ালাদের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি কি হবে এ বইয়ে তাও সবিস্তারে লিখেছেন। এমনকি কর ফাঁকি দেয়ার জন্য যারা দু’প্রস্থ খাতা রাখেন তাদেরকে নিরুৎসাহিত করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা তিনি তখনকার তাঁর দেশীয় অভিজাতদের ল্যাটিন ভাষায় নয় বরং তুসকানি প্রদেশের স্থানীয় ভাষাতে লিখেছেন। আমরা বাংলাকে বাদ দিয়ে যেভাবে ইংরেজীতে বলছি লিখছি তাতে মনে হয় জাতি হিসাবে আমরা আত্মহত্যার পথই বেছে নিয়েছি।

অনুবাদের যে চিরকালীন ঝুঁকি রয়েছে যা ইংরেজী অনুবাদকও তাঁর ভূমিকাতে স্বীকার করেছেন তা আমার ক্ষেত্রেও সত্য। ভাষান্তরে মূলের প্রতি সুবিচার করা প্রায় দু:সাধ্য। তবে যতদূর সম্ভব ইংরেজী মূলকে ঠিক রেখে ভাবানুবাদ করার চেষ্টা করেছি। আমার ভাষা পাঠকদের ভালো লাগবে কি’না সেটাও আমার চিন্তার বিষয় ছিলো। তাই ভাষার দিক থেকে যতটা সম্ভব সহজ হতে চেয়েছি। জানিনা পেরেছি কিনা। গোলমেলে বাংলা বানান রীতির কারণে প্রথমেই গোল বাধে। এ ব্যাপারে আমার লেখার যে এতদিনের অভ্যাস গড়ে উঠেছে তাইই রাখলাম। আশা করি অপরাধ নেবেন না। আমি আশা করিনা যে এ বই পাঠ্য বই হিসাবে স্বীকৃতি পাবে। তার দরকারও নেই। কারণ গত পাঁচশ বছরে হিসাববিজ্ঞান অনেকদূর এগিয়েছে, যদিও লুকার ডাবল এন্ট্রি সিষ্টেমের মূল নিয়ম এখনো সমানভাবে কার্যকরী।

অধ্যাপক জেরেমি ক্রিপস, দি প্যাসিওলি সোসাইটি’র ডেভিড ই টিনিয়াস ও উইলিয়াম এল ওয়েস, মেরী লিন্ডেন সেপালভেডা, এমএল সবাইকে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এ অনুবাদটি প্রকাশের ব্যাপারে ’কর্পোরেট সংবাদ’ ও এর সম্পাদক জনাব মো: মিজানুর রহমান এফ সি এস’কে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এটা থেকে কেউ কিছু পেল কিনা তা জানিনা। তবে এটি অনুবাদ করে আমি আনন্দ পেয়েছি। হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে ডাবল এন্ট্রি সিষ্টেমের জন্মদাতার প্রতি আমার যে দায় তারই স্বীকৃতি হিসাবে আমার এ বিনম্র নিবেদন।

লেখক: গবেষক কোম্পানি ল, পেশাদার হিসাববিদ ও সহ প্রতিষ্ঠাতা, আইসিএসবি।

প্রিয় পাঠক, দ্বিতীয় অনুবাদটি আসছে আগামী শনিবার

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানি ২টি হলো-গ্লোবাল...

জেড ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হয়েছে। কোম্পানিটিকে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঢাকা স্টক...

পুঁজিবাজারের ২ কোম্পানির এজিএমের তারিখ পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল লিমিটেড ও বিবিএস কেবলস পিএলসির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ পরিবর্তন করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ...

শরীয়াহ পরিপালনে ইউনিয়ন ব্যাংক বদ্ধপরিকর

কর্পোরেট ডেস্ক : ইসলামী ব্যাংকিং এমন এক ব্যাংক ব্যবস্থা যেখানে সকল লেনদেনে সুদ নিষিদ্ধ।ব্যাংকিং সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম ইসলামী শরীয়ার আলোকে পরিচালিত হয়। ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি....

সাউথইস্ট ব্যাংক, টাইনি টটস ও সামার ফিল্ড স্কুলের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

কর্পোরেট ডেস্ক : সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি. টিউশন ফি কালেকশন সার্ভিস, পে-রোল ব্যাংকিং এবং অন্যান্য ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদানের জন্য ব্যাংকের হেড অফিসে টাইনি টটস ও...

বরগুনায় প্রান্তিক মানুষের মাঝে এনআরবিসি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ

কর্পোরেট ডেস্ক : বরগুনা জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নিন্ম আয়ের প্রান্তিক মানুষদের মাঝে প্রকাশ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুন:অর্থায়ন তহবিল কর্মসূচির আওতায়...