অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) স্থাপনের ফলে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আহরণ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে এবং ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রত্যেক মাসে ইএফডি মেশিন প্রতি গড়ে ভ্যাট আদায় হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা। এর আগে সংশ্লিষ্ট দোকানে প্রতি মাসে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ ছিলো মাত্র চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি বিভাগের সদস্য ড. মইনুল খান এ তথ্য জানান। রাজধানীর আগারগাঁও রাজস্ব ভবন সভাকক্ষে এনবিআর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
মইনুল খান বলেন, ‘ইএফডি স্থাপনের ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট আদায় বেড়েছে এবং স্বচ্ছতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।’ ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে ইএফডি আগের তুলনায় অনেক কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ইএফডি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে এবং চলতি করবর্ষের মধ্যে ৬০ হাজার মেশিন স্থাপন করা হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিনটি অঞ্চল ভাগ করে মেশিন বসানো হচ্ছে। এটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ইএফডি বসানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কাগজে কলমে যে চালান কাটা হয়-সেটি সরকারের কোষাগারে জমা হলো কিনা, তা জানা যায় না। কিন্তু ইএফডি মেশিনের মাধ্যমে কেনাকাটা হলে চালানের তথ্য আমরা পেয়ে যাচ্ছি। তাই ইএফডি ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক কার্যকর পদ্ধতি।
এক প্রশ্নের উত্তরে মইনুল খান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কোন কোন ক্ষেত্রে আমদানি ৩০ শতাংশ কমেছে। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করায় আমদানি কমলেও ভ্যাট আহরণ কমেনি, বরং ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ ভ্যাট ফাঁকি রোধ, নেট সম্প্রসারণ এবং বিশেষ করে মনিটারিং জোরদার করার ফলে ভ্যাট আহরণ বেড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট নিরীক্ষা) ড. মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, ভ্যাট আহরণ বাড়ানোর জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছি এবং ইতোমধ্যে একাধিক মামলার রায় সরকারের পক্ষে এসেছে। যা ভ্যাট আহরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে এনবিআরের নেওয়া নানা কর্মসূূচি তুলে ধরে সংস্থার চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, এবারের ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- ‘আমার ভ্যাট আমি দেব, কেনার সময় চালান নিব।’ এনবিআর জনসাধারণের মধ্যে ভ্যাট সচেতনতা তৈরি করতে চাই- তাই এবার এই শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কোন সেবা বা পণ্য কেনার সময় ভ্যাট চালান সংগ্রহের অনুরোধ জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন,‘কোন কিছু কেনার সময় চালান বা ভাউচার না নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে আমাদের মধ্যে। কিন্তু চালান সংগ্রহ করলে ভ্যাটের টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হওয়া সহজ। তাই দেশবাসীকে অনুরোধ করবো কেনাকাটার সময় চালানটা নিবেন।’ একইসঙ্গে তিনি ইএফডি মেশিন যে দোকানে আছে, সেখান থেকে কেনাকাটা করার অনুরোধ জানান।
সরকার প্রতিবছর যে রাজস্ব আয় করে তার ৩৮ শতাংশ আসে ভ্যাট থেকে উল্লেখ করে রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘দিন দিন উন্নয়ন বাজেটের আকার বাড়ছে। দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। বর্ধিত বাজেট বাস্তবায়নে বেশি অর্থের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ খাতগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে আছে ভ্যাট।’
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব বোর্ড ও ভ্যাট বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেশাদারিত্ব এবং সেবার মনোভাব নিয়ে নিরলসভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, এ বছর ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে এনবিআর বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে আছে-মোবাইলে এসএমএস, ভ্যাট নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমে অনুষ্ঠান, ক্রোড়পত্র প্রকাশ, সেরা ভ্যাট দাতাদের সম্মাননা, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্টিকার, বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙানো প্রভৃতি। আগামী ১০ ডিসেম্বর পালিত হবে ভ্যাট দিবস এবং ভ্যাট সপ্তাহ চলবে ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।