শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: বয়স মাত্র ৯ বছর। এ বয়সে মাঠে দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলা আর স্কুলে থাকার কথা। কিন্তু সাতক্ষীরার ছোট্ট শিশু মিহান আজ বিছানায় বন্দি, কোমর থেকে নিচের অংশ সম্পূর্ণ অচল। দুর্ঘটনার পর ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালাতে না পেরে পড়ে আছে ঘরে। একদিকে ছেলের অসুস্থতা, অন্যদিকে দুশ্চিন্তায় স্ট্রোক করে মৃত্যুশয্যায় বাবা আব্দুস সাত্তার।
স্বামী ও সন্তানের অসুস্থতায় সংসার আর চিকিৎসার ভার একা কাঁধে নিয়েছেন মিহানের মা মোমেনা খাতুন। সাতক্ষীরা আলিয়া মাদরাসার পেছনের দাসপাড়া এলাকার এই পরিবারে এখন শুধু কান্না আর অসহায়ত্ব।
২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর আলিয়া মাদরাসার সামনের সড়কে যাত্রীবাহী একটি বাস ধাক্কা দেয় মিহানকে। শিশুটি ছিটকে পড়ে রাস্তায়। সেই দুর্ঘটনার পর কোমর থেকে পা পর্যন্ত নিস্তেজ হয়ে পড়ে তার শরীর।
মিহানের মা মোমেনা খাতুন বলেন, মিহান আমার একমাত্র ছেলে। সেদিন ও বন্ধুদের সঙ্গে দোকানে গিয়েছিল। রাস্তা পার হওয়ার সময় হঠাৎ বাস এসে ধাক্কা দেয়। সাতক্ষীরা থেকে ঢাকা পর্যন্ত চিকিৎসা করিয়েছি। ২০-২২ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। জমি জমা যা ছিল সব বিক্রি করেছি। এখন আর সামর্থ্য নেই। বাড়ি ফিরে আসতেই হলো।
শুধু মিহান নয়, দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন বাবা আব্দুস সাত্তারও। এক সময়ের দিনমজুর এই মানুষটি প্রথমে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন পরে দ্বিতীয়বার আরও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এখন মৃত্যুপথযাত্রী।
প্রতিবেশীরা জানান, সাত্তার গাজী আগে দিনমজুরের কাজ করতেন। ছেলের চিকিৎসার জন্য সহায় সম্পদ বিক্রি করে এখন নিঃস্ব। আমরা সাধ্যমতো সাহায্য করেছি। এখন আর পারছি না। এই পরিবারটির জন্য সমাজের হৃদয়বান মানুষদের এগিয়ে আসা জরুরি।
ছোট্ট মিহান কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে আমি সুস্থ হয়ে খেলতে চাই, স্কুলে যেতে চাই। দয়া করে আমার জন্য কিছু করুন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. অসীম কুমার বলেন, ছেলেটির স্পাইনাল কর্ডে ইনজুরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে কোমর থেকে নিচের অংশ অচল। উন্নত চিকিৎসায় ওর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তবে চিকিৎসা ব্যয়বহুল। খুলনা বা ঢাকাতে চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ জানান, আমাদের মানবিক ফান্ড থেকে সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিশুটির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেও কাজ করা হচ্ছে।
মানবিক সহায়তা দিতে ইচ্ছুক হৃদয়বান ব্যক্তিরা ০১৮১৪০৯৫৭৫৪ নন্বরে যোগাযোগ করতে পারেন মিহানের মা মোমেনা খাতুনের সঙ্গে।


