কর্পোরেট ডেস্ক : আইসিএমএবি প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এফসিএমএ বলেছেন, বিগত দেড় দশকের অব্যবস্থাপনায় দেশের নিরীক্ষা ইকোসিস্টেম ভেঙে পড়েছে, বিনিয়োগ কমেছে এবং খেলাপি ঋণ ৪.২ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। দুর্বল নিরীক্ষার কারণে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়াসহ অনেক দেশে একাধিক সংস্থাকে Statutory Audit-এর অধিকার দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) বেলা ১১ টায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) অডিটরিয়ামে ’অডিট আওতা সম্প্রসারণে সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন আইসিএমএবি’র প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
‘অডিট আওতা সম্প্রসারণে সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে আইসিএমএবি সভাপতি বলেন, দেশের অডিট বা নিরীক্ষা প্রতিবেদন ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগেই ব্যাংক, আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া সহজ হয়। নিম্নমানের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের কারণে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। একই কারণে দেশি ভালো প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে ভয় পায়।
তিনি বলেন, নিম্নমানের নিরীক্ষা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ণ করেছে, যার ফলে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে এফডিআই ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে ভিয়েতনামে বিদেশি বিনিয়োগ ৩৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশে খেলাপী ঋণের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে খেলাপী ঋণ ৪ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ২৫ শতাংশ। পর্যাপ্ত তদারকির অভাব, দুর্বল আইন প্রয়োগ, এবং সীমিত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, যেখানে তদারকির ব্যর্থতাই নিয়মে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক অনুশীলনের উদাহরণ, বিশ্বব্যাংকের মতো দাতা সংস্থাগুলোর পরামর্শ এবং অন্যান্য অংশীজনের মতামত বিবেচনায় নিয়ে ২০১৫ সালে ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়। সেই সময়ে, এই সংস্কার কার্যকর করার ক্ষেত্রে আইসিএমএবি কার্যকরী অংশীদার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আইসিএমএবি’র প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধিরধারা বজায় রাখতে গেলে নিরীক্ষা ইকোসিস্টেমের আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। এই সংস্কারের কথা চিন্তা করেই এফআরসি এ্যাক্ট-২০১৫ চাটার্ড একাইন্ট্যান্ট (সিএ) এবং কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টসের (সিএমএ) দেরকে প্রফেশনাল হিসাববিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এসময় এই স্বীকৃতি অন্যান্য সব আইনে সন্নিবেশিত করার দাবিও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বিগত দেড় দেশকের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কারনে বাংলাদেশে নিরীক্ষা ইকোসিস্টেম সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে জাতীয় অর্থনীতিতে-যা দেশের বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক খাত এবং অস্থির শেয়ারবাজারে প্রচলিত দূর্বল শাসনব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ও ফাইনান্স অর্ডিন্যান্সে আইসিএমএবি-এর অধিকার অন্তর্ভুক্ত করারও জোর দাবি জানানো হয়।
আইসিএমএবি দেশের নিরীক্ষা কার্যক্রমে গুণগত পরিবর্তন এবং আর্থিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় CMA সদস্যদের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সংস্থাটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ দেলোয়ার হোসেন, ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোঃ কাউসার আলম, সেক্রেটারি হাসনাইন তৌফিক আহমেদ এবং কাউন্সিল সদস্য মোঃ আখতারুজ্জামান ও মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এবং নির্বাহী পরিচালক মোঃ মাহবুব-উল-আলম এফসিএমএ।


