সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র প্রশান্ত হীরণ (১৪)। রবিবার (১ জুন) বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাস্তান গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত প্রশান্ত স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র এবং হীরণ বাবুর একমাত্র সন্তান।
পারিবারিক সূত্র জানায়, বিকেলে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে প্রশান্ত তার বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়ির পাশের ধানক্ষেতে ধান বহনের কাজে যায়। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বজ্রপাত ঘটে, যা সরাসরি প্রশান্তের শরীরে আঘাত হানে। ঘটনাস্থলেই সে অচেতন হয়ে পড়ে।
পরে স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকদের ভাষ্য, বজ্রপাতের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে তাৎক্ষণিকভাবে তার মৃত্যু ঘটে।
প্রশান্তের মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পুত্রশোকে নির্বাক বাবা, আর শোকে পাগলপ্রায় মা বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা। এলাকাবাসীর ভাষ্য, প্রশান্ত ছিল ভদ্র, শান্ত স্বভাবের ও মেধাবী ছাত্র। সে ছিল বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রিয়।
প্রশান্তের সহপাঠীরা কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না যে, তাদের প্রাণপ্রিয় বন্ধু আর কোনোদিন স্কুলে ফিরবে না। বিদ্যালয়ে চলছে শোকাবহ পরিবেশ। শিক্ষকরা বলছেন, সে ছিল অত্যন্ত মনোযোগী, ভদ্র এবং নিয়মিত ছাত্র। তার হঠাৎ মৃত্যুতে সবাই শোকাহত।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমরা এক সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীকে হারালাম। তার এই অকাল মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”
এ ঘটনায় তাড়াশ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, “এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে প্রাথমিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছরই বজ্রপাতে খোলা মাঠে কৃষিকাজরত অনেক মানুষ প্রাণ হারান। বিশেষ করে ধান কাটা কিংবা বহনের সময় এই ঝুঁকি বেড়ে যায়। তারা প্রশাসনের প্রতি বজ্রপাত প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করার আহ্বান জানান।
প্রশান্তের মৃত্যু যেন শুধু একটি পরিবারের নয়, একটি গ্রামেরও অপূরণীয় ক্ষতি। সম্ভাবনায় ভরা একটি জীবনের এমন অকাল অবসান সবাইকে শোকাহত করেছে।


