সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর পূর্বপাড় থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহনের দখলে ব্যস্ততম এই পথ। প্রতিদিন প্রায় ১৮ হাজার যান চলাচল করলেও, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন-করিমন এবং ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে বড় ও দূরপাল্লার গাড়িগুলোর গতি কমে আসছে।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক দিয়ে অন্তত ২২ জেলার যানবাহন চলাচল করে। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের সময়ে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় আরও বেশি। অথচ মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দেখা যায় তিন চাকার যানবাহনের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য। যাত্রী তুলতে মাঝরাস্তায় হঠাৎ থেমে যাওয়া, উল্টোপথে চলাচল, ব্রেক ও সিগনাল লাইট না থাকাসহ নানা অনিয়মে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের আওতায় ১০৫ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে হাটিকুমরুল-যমুনা সেতু টোলপ্লাজা ২২ কিলোমিটার, হাটিকুমরুল-নাটোর ২৮ কিলোমিটার, হাটিকুমরুল-চান্দাইকোনা ২১ কিলোমিটার এবং হাটিকুমরুল-বাঘাবাড়ী ঘাট ৩৪ কিলোমিটার।
প্রাণহানি বেড়েই চলেছে
সর্বশেষ দুই মাসে এই মহাসড়কে অন্তত ১৭টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২২ জন। এর বেশিরভাগই ঘটেছে তিন চাকার অবৈধ যানবাহনের কারণে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব যানের অধিকাংশ চালক অপ্রাপ্তবয়স্ক, তাদের নেই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বা যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন। তবু তারা নির্বিঘ্নে মহাসড়কে চলাচল করছে। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন যাত্রীরা।
চালকদের ক্ষোভ ও অসহায়ত্ব
বগুড়াগামী টি আর ট্রাভেলসের চালক আবদুল খালেক বলেন,
‘মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও তারা অবাধে চলছে। এরাই মূলত দুর্ঘটনার কারণ।’
একই মত দেন একতা পরিবহনের চালক সোহেল রানা। তিনি বলেন,
‘এই সব যানবাহনের চালকরা প্রশিক্ষণহীন ও বেপরোয়া। বড় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হওয়ায় আমরা বিপদে পড়ি।’
অন্যদিকে এক সিএনজি চালক হযরত আলী বলেন,
‘সংসার চালাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে উঠতে হয়। আয় রোজগারের বিকল্প পথ নেই আমাদের।’
পুলিশের দাবি, অভিযান চলছে
তবে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুর রউফ বলেন,
‘অবৈধ যানবাহন ঠেকাতে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। অনেককে জরিমানা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনা রোধে গতি নিয়ন্ত্রণেও কাজ করছি। তবে চালক-মালিক ও যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে।’
জনমতের দাবি
স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীরা বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহনের অবাধ চলাচল রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। প্রশাসনের তৎপরতা আরও জোরদার করা না গেলে দুর্ঘটনা রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।


