সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একাধিক আলোচিত অপরাধ ও পুলিশের দায়িত্বে গাফিলতির ঘটনায় জেলার পাঁচটি থানার ওসির মধ্যে দুইজনকে প্রত্যাহার ও তিনজনকে রদবদল করা হয়েছে।
সোমবার (৫ মে) পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে এই আদেশ জারি করা হয়।
আদেশপত্রে “জনস্বার্থ” শব্দটি ব্যবহার করা হলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, দুর্নীতি ও অপরাধীদের প্রতি অতি সহানুভূতির অভিযোগ রয়েছে।
প্রত্যাহার ও বদলির তালিকা:
প্রত্যাহার:
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান-ওসি, রায়গঞ্জ
মো. রওশন ইয়াজদানী-ওসি, এনায়েতপুর
(উভয়কেই শাস্তিমূলকভাবে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে)
রদবদল:
মোখলেসুর রহমান-সলঙ্গা থেকে সদরে
হুমায়ুন কবির-সদর থেকে সলঙ্গায়
মো. আনারুল ইসলাম-যমুনা সেতু পশ্চিম থেকে এনায়েতপুরে
পটভূমি ও অভিযোগের বিবরণ:
রায়গঞ্জে ব্যক্তিগত বন্দিশালায় জিম্মি রাখা:
চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সোনারাম গ্রামে পল্লী চিকিৎসক নাজমুল হোসেন আরাফাত ও ইউপি সদস্য শরীফুল ইসলাম শরীফের ব্যক্তিগত বন্দিশালায় দুই গ্রামবাসীকে ছয় মাস আটকে রাখা হয়।
পরিবার আগেও জিডি করলেও রায়গঞ্জ থানা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সদর থানায় ঘুষ ও ‘সামারি বাণিজ্য’:
বিচারপ্রার্থী নাগরিকদের হয়রানি, ঘুষ নেওয়া ও বিধি বহির্ভূতভাবে আসামি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাব ইন্সপেক্টর মনিরুল ও আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে। যদিও তাদের শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে, স্থানীয়রা বলছে দুর্নীতির চিত্র এখনো বিদ্যমান।
ডাকাতি ও দায়িত্বে অবহেলা:
যমুনা সেতু পশ্চিম থানায় একাধিক ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। ২৪ এপ্রিল ধাওয়া খাওয়া ডাকাত দলের ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম নিহত হন।
এনায়েতপুরে ধর্ষণ ও মামলায় গড়িমসি:
স্থানীয় এক গৃহপরিচারিকার ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি। একই থানায় এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাতেও গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে।
সলঙ্গায় ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ:
চড়িয়াকান্দি গ্রামে বাবার সহায়তায় এক গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের গড়িমসি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
ওসিদের প্রতিক্রিয়া:
রায়গঞ্জের ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “জিম্মির ঘটনায় একজন আসামি ধরা পড়েছে, বাকিরা পলাতক।”
এনায়েতপুরের ওসি রওশন ইয়াজদানী দাবি করেন, “দায়িত্বে অবহেলার কোনো প্রমাণ নেই, আমি বিধ্বস্ত থানা পুনর্গঠন করেছি।”
সদরের ওসি হুমায়ুন কবির বলেন, “সাব ইন্সপেক্টর মনিরুল ও রাজ্জাকের অপকর্মের দায় আমি বহন করতে পারি না, তারা আমার যোগদানের আগেই বদলি হয়ে গেছেন।”
পুলিশ সুপারের বক্তব্য:
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, “পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি বা প্রত্যাহার চাকরির স্বাভাবিক অংশ। আমরা আইনি শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”


