মোঃ শরিফ উদ্দিন বাবু, শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুরের গারো পাহাড়সংলগ্ন তিনটি উপজেলায় পাহাড়ী ঢালুতে বন্যহাতির আক্রমণের আশঙ্কায় কৃষকরা পাকেনি এমন ধান আগেভাগেই কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।
সম্প্রতি ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে একাধিক বন্যহাতির দল লোকালয় থেকে আবাদী জমিতে ঢুকে ধানক্ষেত ও সবজি বাগানে হানা দেয়। এতে বহু ক্ষেতের ফসল তছনছ করেছে এবং কৃষকদের মধ্যে বর্তমানে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় কৃষক রমিজ উদ্দিন বলেন, “আমি পাহাড়ের ঢালে ৭০ শতাংশ জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলাম। মাঝেমধ্যে হাতির দল পাহাড় থেকে নেমে এসে ধানক্ষেত বিনষ্ট করছে। তাই পেটের খোরাকী ও খরচের টাকা তুলতে বন্যহাতির ভয়ে আধাপাকা ধানই কেটে ঘরে তুলছি।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাতির দল সাধারণত ভোর রাত বা সন্ধ্যার সময় লোকালয় থেকে পাহাড়ী জনপথে আসে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একাধিক ফসলি ক্ষেত তছনছ করে ফেলে। গ্রামের যুবকেরা মশাল, ঢোল, ও লাইট ব্যবহার করে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করলেও সবসময় তাতে কাজ হয় না।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খাদ্যের সন্ধানে হাতির দল প্রায়ই ভারত সীমান্ত পেরিয়ে শেরপুরের গারো পাহাড়ে প্রবেশ করে। বনভূমি ও চলাচলের পথ সংকুচিত হওয়ায় তারা গ্রাম ও ধানক্ষেতে চলে আসছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, “আমরা হাতির গতিবিধির ওপর নজর রাখছি এবং স্থানীয়দের সতর্ক করছি। সোলার ফেন্সিংসহ টেকসই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সরকারি সহায়তা দরকার। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এই সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, “নিয়ম হলো শতকরা ৮০ ভাগ পাকলে ধান কাটতে হয়। কিন্তু পাহাড়ি অঞ্চলে বন্যহাতির তাণ্ডব চলছে। তাই ওই এলাকার কৃষকের জমির ধান যদি শতকরা ৬০ ভাগ পাকে, তাহলে তাদের ক্ষেতের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে অন্তত কৃষকরা খোরাকির ধান ও খরচের টাকা উঠাতে পারবেন।”
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি জানান, “গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তাণ্ডব এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে বনবিভাগের মাধ্যমে সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।”
প্রাণ বাঁচাতে ধান কাটছেন কৃষক, আর প্রতিদিন বাড়ছে তাদের ক্ষতির তালিকা এমন বাস্তবতা থেকে উত্তরণে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে শেরপুরের গারো পাহাড়ের মানুষের জন্য।


