সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জে জেলা প্রশাসনের অনুমোদিত নির্দেশনা উপেক্ষা করে শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় চলছে অবৈধভাবে প্রবেশ টিকিট বিক্রি। বিষয়টি প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা নিয়ে শহরবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সিনিয়র সহকারী কমিশনার রোমানা রিয়াজ স্বাক্ষরিত পত্রে ২৬ জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০ দিনের মেলা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে স্থান সংক্রান্ত জটিলতায় সেই সময়সূচি পরিবর্তন করে পরবর্তীতে ৫ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত মেলা পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়। মেলায় ১২টি শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি প্রদান করা হলেও তা প্রায় কোনো শর্তই মানা হচ্ছে না।
শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ: অনুমোদনপত্রে রাত ৯টার পর মেলা বন্ধের নির্দেশ থাকলেও মেলা চলছে রাত ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। এছাড়া ১১ নম্বর শর্তে প্রবেশ টিকিট না রাখার সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকলেও শুরু থেকেই মেলায় চলছে ১০ টাকা মূল্যের টিকিট বিক্রি। এতে প্রতিদিন গড়ে ২-৩ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ: মেলায় অবৈধভাবে প্রবেশ টিকিট চালুর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ হচ্ছে। এক শিক্ষার্থী রাফসান বলেন, “টিকিটের অনুমতি নেই জেনেও টাকা নিচ্ছে, অথচ প্রশাসন চুপচাপ।” অনেক দর্শনার্থী দ্রুত টিকিট বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ: স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, মেলায় স্টল বরাদ্দে সিরাজগঞ্জের ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য না দিয়ে বাইরে থেকে ব্যবসায়ী এনে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে স্থানীয়রা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, “নিম্নমানের পণ্য এনে উচ্চ দামে বিক্রি করছে বহিরাগতরা। এতে আমাদের বিক্রি একেবারে কমে গেছে।”
আইনশৃঙ্খলার শঙ্কা: স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, মেলাকে কেন্দ্র করে উঠতি বয়সীদের আড্ডা, ঝগড়া-মারামারির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অতীতে এ ধরনের ঘটনার নজিরও রয়েছে।
প্রশাসনের অবস্থান: মেলায় টিকিট বিক্রি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মায়িশা মালিহা অদ্রি বলেন, “টিকিট বিক্রির বিষয়টি আমরা জানি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে আমরা কিছু করতে পারি না।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গনপতি রায় বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলুন।” একাধিকবার ফোন করা হলেও জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ফোন রিসিভ করেননি এবং হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
মেলা কমিটির সাফাই: মেলা কমিটির সদস্য মো. আলম শেখ জানান, “প্রবেশ টিকিটের অনুমতি জেলা প্রশাসক দেননি ঠিকই, তবে সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স আমাদের অনুমতি দিয়েছে। স্থানীয়দের স্টল দিলে তারা টাকা দিতে চায় না, তাই বাইরের ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।”


