সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার কার্যক্রম এখনও চলছে ভাড়া করা ভবনে। ঘটনার সাত মাস পার হলেও নিজস্ব ভবনটি চালু করা যায়নি। তবে আগের ভবনের রুমগুলো ব্যবহার উপযোগী এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম গোছানোর কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। আগামী মাসের (এপ্রিল)।
প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে ওই ভবনে ফিরতে পারবেন বলে আশা করছেন এনায়েতপুর থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রওশন ইয়াজদানী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট সকালে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন শিক্ষাথী নিহত হন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানায় আক্রমণ চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ওসিসহ ১৫ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বিকাল পর্যন্ত দফায় দফায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর যারা জীবিত ছিলেন তারা ওই ভবনের ছাদে থাকা পানির ট্যাংকে লুকিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। পরে সন্ধ্যার কিছু সময় আগে সেনাবহিনী এসে তাদের উদ্ধার করে। এদিন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ভাঙচুরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় পুরো থানা। রাস্তা, ডোবায় পড়ে থাকতে দেখা যায় পুলিশের মরদেহ, পোশাক, হেলমেটসহ বিভিন্ন সামগ্রী।
লুট হয়ে যায় থানার অস্ত্র, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন সামগ্রী। এর ১৪ দিন পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সমাবেশ করে পাশের একটি এনজিও ভবনে সাময়িকভাবে থানার কার্যক্রম শুরু হয়। সেই থেকে ভাড়া ভবনেই স্বল্প পরিসরে চলছে থানার কার্যক্রম।’
সিরাজগঞ্জের চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে এনায়েতপুর থানা গঠিত। জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমটার দক্ষিণে যমুনা নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা এনায়েতপুর থানার আওতায় রয়েছে পূর্বে চৌহালী, উত্তরে বেলকুচি এবং পশ্চিম ও দক্ষিণে শাহজাদপুর উপজেলার মধ্যবর্তী স্থান। ফলে এই থানাটি সব দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।’
সরেজমিন থানা এলাকা ঘুরে জানা গেছে, গত মাসে সরকারিভাবে ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর সংস্কার, মেরামত ও আসবাবপত্র সংযোজনের কাজ শুরু করেছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যা এখনও চলমান রয়েছে।’ ভবন সংস্কার কাজ শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে এবং এপ্রিলে কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে জানান থানার ওসি রওশন ইয়াজদানী।
তিনি জানান, থানা পুলিশের কাজের গতি ফেরাতে সম্প্রতি সরকারিভাবে দুটি গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত ৭ মাসে থানায় প্রায় ৩০-৩৫টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া আদালত কর্তৃক নির্দেশিত মামলাগুলোর তদন্ত কাজ চলছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, পুলিশের সেবা পেতে এখনও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রওশন ইয়াজদানী বলেন, অনেকে অনেক কথা বলতেই পারেন। আমি আসার পর পুরো এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। বর্তমান সরকারের দিকনির্দেশনার আলোকে থানার কাজ চলছে। আশা করি নিজস্ব ভবনে ফিরলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
১৫ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, মামলার বাদী পুলিশ হলেও মামলাটি রায়ের পর্যায়ে যেতে সময় লাগবে এটাই সত্য। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, বিষয়টি পুলিশের উচ্চ মহলের নজরে আছে। এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।