মো. ওমর ফারুক অনিক, মালদ্বীপ প্রতিনিধি: মালদ্বীপের এডিএইচ ধানগেঠি আইল্যান্ডের ব্যবসায়ী মাহমুদ আবুবকরু (৫৭) হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশি নাগরিক শাহ আলম মিয়া সেলিম (২৯) বলেছেন, তিনি মাহমুদকে হত্যা করেননি, তাকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় ও দোভাষীর নির্দেশে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
মালদ্বীপের গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, ৫৭ বছর বয়সী মাহমুদকে গত ১৫ই অক্টোবর ২০২১ সালে রাজধানীর দুরবর্তী আইল্যান্ড ধানগেঠির একটি পরিত্যক্ত বাড়ির পানির কূপের ভিতর খুন করে রাখা হয়েছিল যা পরে কূপ থেকে মাহমুদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রবাসী বাংলাদেশি শাহ আলাম সেলিম (২৯) একই আইল্যান্ডে একজন বয়স্ক ব্যক্তির লিভ-ইন কেয়ারটেকার হিসাবে কাজ করতো, তাকে মাহমুদ হত্যার সন্দেহজনক হিসেবে পরের দিন পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করলে রাষ্ট্রপক্ষ আইনজীবী তার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ উত্থাপন করেন।
প্রথমটি উদ্দেশ্য নিয়ে হত্যা এবং পরেরটি একটি মৃতদেহের অপব্যবহার। প্রবাসী সেলিম তার জবানবন্দীতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে হত্যা বা অপরাধের কথা স্বীকার করেন এবং আদালতে উভয় অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হোন তিনি। আদালত বাদীপক্ষ বা নিহতের সাতজন উত্তরাধিকারীর মতামত চাইলে তারা মাহমুদের হত্যার পরিবর্তে কোনো টাকা বা ‘দিয়াত’ চান না। তারা হত্যার বদলে সমান প্রতিশোধ নিতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মালদ্বীপের ফৌজদারি আদালত ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সেলিমকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এবং এ-ও উল্লেখ করেন আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করলে নিম্ন আদালতের রায়ের বৈধতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপক্ষকে মামলাটি হাইকোর্টে জমা দিতে।
১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার হাইকোর্টের অনুষ্ঠিত শুনানিতে প্রবাসী সেলিম এর জবানবন্দীতে উল্লেখ করেন, তার জন্য সাজানো দোভাষী পরিবর্তন করে বাংলাদেশি দোভাষীর ব্যবস্থা করে দিতে। প্রবাসী সেলিম অভিযোগ করে বলেন, তার জন্য নিয়োগ দেওয়া দোভাষী খলিল তাকে এটি বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে সে এর আগে আদালতে মামলার হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তাকে তার দোভাষী খলিল শিখিয়ে দিয়েছিলেন সে যদি হত্যার কথা স্বীকার করে তাহলে তাকে নির্বাসিত/মুক্ত করে দেশে পাঠানো হবে।
সেলিম বলেন, আমি মাহমুদকে খুন করিনি বা খুন করতে পারিনা, দোভাষী খলিলের শিখানো কথা বলায় আমার চরম ভুল ছিলো। এ জন্যই আমি খলিলকে আমার দোভাষী হিসেবে চাই না নতুন বাংলাদেশি দোভাষী চাইছি।
এছাড়াও প্রবাসী সেলিম আরও বলেছেন যে তিনি একজন আইনজীবীর সাথে মামলাটি চালিয়ে যেতে চান এবং প্রসিকিউশনকে একজন আইনজীবীর ব্যবস্থা করে দিতে বলেছেন। তিনি নিম্ন আদালতে সেলিমের প্রতিনিধিত্বকারী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী নজীব ছাড়া অন্য একজন আইনজীবীর ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
উল্লেখ, প্রবাসী শাহ আলাম সেলিম এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ভাষ্যমতে, তিনি মালদ্বীপের স্থানীয় ধানগেঠির ব্যাবসায়ী মাহমুদকে একটি ছুরি ও দুটি ধারালো লোহার রড দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন, যা পরে নিহত মাহমুদের বুকে ও ঘাড়ে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এবং প্রবাসী সেলিম আদালতে স্বীকারোক্তি দেন মাহমুদের টাকা চুরির জন্য তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।