নিজস্ব প্রতিবেদক : শনিবার (২৮ অক্টোবর) বেলা ১১টা ৪৩ মিনিটে বহুল প্রতীক্ষিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলটি উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বেলা ১২টায় টানেলের অপর প্রান্তে পৌঁছে টোল পরিশোধ করেন তিনি।
১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটি রোববার (২৯ অক্টোবর) ভোর ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তবে কোনো ধরনের তিন চাকার যান বা মোটরসাইকেল এই সুযোগ পাবে না।
চলতি বছরের ১৩ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভেতর দিয়ে যেতে হলে কোন গাড়িকে কত টোল দিতে হবে, তা চূড়ান্ত হয়।
কোন গাড়িতে কত টোল :
টানেলের ভেতর দিয়ে ১২ ধরনের যানের জন্য টোলের হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষের উপসচিব মো. আবুল হাসান স্বাক্ষরিত গেজেট অনুযায়ী, টানেলের ভেতর দিয়ে চলতে হলে কার ও জিপকে দিতে হবে ২০০ টাকা। একই হারে টোল দিতে হবে পিকআপকে। আর মাইক্রোবাসকে পরিশোধ করতে হবে ২৫০ টাকা। বাসের ক্ষেত্রে ৩১ আসন বা এ রকম আসনের গাড়িকে দিতে হবে ৩০০ টাকা, ৩২ আসন বা এর বেশি আসনের বাসগুলোকে পরিশোধ করতে হবে ৪০০ টাকা। বাসের (৩ এক্সেল) জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা।
এ ছাড়া ৫ টনের ট্রাকের জন্য ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকের জন্য ৫০০ এবং ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকের জন্য ৬০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। টানেলের ভেতর দিয়ে যেতে হলে ৩ এক্সেলের ট্রাক বা ট্রেইলরকে দিতে হবে ৮০০ টাকা। চার এক্সেলের ট্রাক বা ট্রেইলরের জন্য এক হাজার টাকা। ৪ এক্সেলের বেশি হলে প্রতি এক্সেলের জন্য বাড়তি ২০০ টাকা করে দিতে হবে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর চালু থাকা শাহ আমানত সেতুতে কারের জন্য ৭৫ টাকা, জিপের জন্য ১০০ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য ১০০ টাকা টোল দিতে হয়। আর ৩১ বা এর চেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৫০ টাকা এবং ৩২ বা তার বেশি আসনের জন্য ১৫৫ টাকা।
শাহ আমানত সেতুতে ৫ টনের ট্রাক, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাক এবং ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকে টোল নেওয়া হয় যথাক্রমে ১৩০, ২০০ ও ৩০০ টাকা। ট্রেইলরের (৪ এক্সেল) টোল ৭৫০ টাকা।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। গত বছরের ২৬ নভেম্বর টানেলের দক্ষিণ প্রান্তের একটি টিউবের পূর্তকাজের সমাপ্তি উদযাপন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ ছাড়া মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ফ্লাইওভার থাকবে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা দিচ্ছে। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
আরও পড়ুন:
বাণিজ্যিক সুবিধা ৬ বছর পর্যন্ত বাড়াতে ইইউ’র প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
বঙ্গবন্ধু টানেল স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রা পথে আরো একধাপ এগিয়ে দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী