অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুর জানিয়েছেন, দেশে এখনও চার মাস চলার মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। তাই ভয়ের কিছু নেই।
রিজার্ভ নিয়ে আমাদের প্যানিকড হবার মতো কিছু হয়নি। এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৪ মাসের আমদানি দায় মেটানোর রিজার্ভ রয়েছে। তবে সতর্ক থাকতে হবে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ শীর্ষ ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজ-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান তিনি।
গভর্নর বলেন, রিজার্ভ নিয়ে আমাদের প্যানিকড হবার মতো কিছু হয়নি। এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৪ মাসের আমদানি দায় মেটানোর রিজার্ভ রয়েছে। তবে সতর্ক থাকতে হবে। গত পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৫ মাসে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি মিলে অতিরিক্ত সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডরার যোগ হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও রেমিট্যান্স বেড়েছে, একই সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে। এখানে প্রবাসীদের অনেক বড় অবদান রয়েছে। এতে চলতি হিসাবের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল সেটা আর নেই।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে থেকে টাকা পাচার কমে গেছে। আগে দুবাই থেকেই ডলার পাচার হয়ে যেতো, এটা কমেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে গুড-গভর্নেন্স ফিরে আসায় টাকা পাচার ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন এসেছে। এতে অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে।
প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে গভর্নর বলেন, দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে বিদেশিদের ব্যাপক সহয়তা পাচ্ছি, আমরা আইনজীবি নিয়োগ করছি। তবে টাকা পাচারকারীদের বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য দিয়ে প্রবাসীরা সহায়তা করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মতো দিনে-দুপুরে এমনভাবে চুরি হয়েছে যা বিশ্বের আর কোথাও আর হয়নি। এখন আমরা টাস্কফোর্স করেছি, বিদেশিরা কাজ করছে। আমরা পাচার কারীদের অর্থ দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ফিরিয়ে আনবো। আমাদের দেশের বাইরের আদালতেও জিততে হবে। এক্ষেত্রে যদি প্রবাসীরা যদি পাচারকারীদের সম্পদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন তাহলে অনুসন্ধানে সুবিধা হবে, অর্থ ফিরিয়ে আনা সহজ হবে।
এসময় তিনি জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনতে আড়াই (২.৫ শতাংশ) শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এতে বছরে সরকারের ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তবে প্রবাসীদের জন্য সরকার ইতিবাচক। চলতি বছরের প্রবাসীদের মাধ্যমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসবে। এখানে দক্ষ শ্রমিক গড়ে তুলেতে পারলে সেটা দ্বিগুণ হতো। প্রতিকূলতা আর রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমরা সবাই মিলে দেশের স্বার্থে কাজ করবো, সরকার প্রবাসীদের এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
প্রবাসীদের সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি এরপর বলেন, সৌদি আরবকে টপকে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষে উঠেছে দুবাই। এটা ভালো লক্ষণ নয়। কারণ, সৌদি আরব থেকে অর্থ প্রথমে দুবাই আসছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসছে। দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে মুদ্রা বিনিময় হার ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করছে।
গভর্নর আরো বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে। রিজার্ভ চুরির ৮০ শতাংশ অর্থ ইতোমধ্যে ফেরানো হয়েছে। বাকি অর্থ আদায়ে মামলা চলছে। আশা করি, মামলায় জিতবে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানই ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। সব অর্থ উদ্ধারে কাজ চলছে। বিদেশিরাও সহযোগিতা করছে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনসহ (এফবিআই) অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।