নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী কমিশনের সময়কালে সংগঠিত শেয়ারবাজারে কারসাজির দায়ে বিতর্কিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরু, তার পরিবারের সদস্য ও সুবিধাভোগি প্রতিষ্ঠানকে ১৩৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৩৪তম কমিশন সভা এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩ অক্টোবর ২০২১ হতে ২৬ অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে (১) মোঃ আবুল কালাম মাতবরকে ৭.২০ কোটি টাকা (২) ডিআইটি কো অপারেটিভ লিমিটেডকে ১৫ কোটি, (৩) কাজী সাদিয়া হাসানকে ২৫ কোটি, (৪) কণিকা আফরোজকে ১৯ কোটি, (৫) মো: আবুল খায়েরকে ১১ কোটি ও (৬) সাজেদ মাতবরকে ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে।
এছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে (১) সাজেদ মাতবরকে ১.৬০ কোটি, (২) মোহাম্মদ বাশারকে ১.১৫ কোটি, (৩) মো: আবুল খায়েরকে ১৯.১৫ কোটি, (৪) কণিকা আফরোজকে ২.৯০ কোটি, (৫) কাজী সাদিয়া হাসানকে ১.৯ কোটি, (৬) কাজী ফুয়াদ হাসানকে ১ লক্ষ, (৭) ডিআইটি কো অপারেটিভ লিমিটেডকে ৮৪ লক্ষ ও (৮) আবুল কালাম মাতবরকে ২২.৩০ কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, ৭ অক্টোবর ২০২১ হতে ২৭ অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে (১) মো: আবুল খায়েরকে ২.৩০ কোটি, (২) আবুল কালাম মাতবরকে ৪.১৫ কোটি, (৩) কাজী সাদিয়া হাসানকে ১১ লক্ষ, (৪) কণিকা আফরোজকে ১ লক্ষ, (৫) ডিআইটি কো অপারেটিভ লিমিটেডকে ১২ লক্ষ, (৬) আলেয়া বেগমকে ১ লক্ষ, (৭) মোহাম্মদ বাশারকে ১ লক্ষ (৮) মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে ১ লক্ষ ও (৯) সাজেদ মাতবরকে ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে।
এছাড়াও ২৮ জুন ২০২১ হতে ৫ আগষ্ট ২০২১ পর্যন্ত সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে (১) মো: আবুল খায়েরকে ১ লক্ষ, (২) মো: আবুল খায়েরকে ১ লক্ষ, (৩) কাজী সাদিয়া হাসানকে ২ লক্ষ, (৪) কণিকা আফরোজকে ১ লক্ষ, (৫) কাজী ফরিদ হাসানকে ৩৫ লক্ষ টাকা ও (৬) কাজী ফুয়াদ হাসানকে ৩৫ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে।
মূল ব্যবসায়ের বাইরে বিনিয়োগ করে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে ৫ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। একই সাথে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে মোনাক মার্ট লিমিটেড এবং সফ্টভিয়ান লিমিটেড এ বিনিয়োগকৃত অর্থ মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডের হিসাবে ফেরত আনবে এই মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে। উক্ত বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ব্যর্থতা অব্যাহত থাকলে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার টাকা অর্থ দন্ড ধার্য করা হয়েছে।
উপরোক্ত তথ্য অনুসারে, সব মিলিয়ে জরিমানার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে একক সর্বোচ্চ ৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরকে। হিরুকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৭ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে। এরপর হিরুর বোন কণিকা আফরোজকে প্রায় ২২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া হিরুর সুবিধাভোগি প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভকে প্রায় ১৬ কোটি টাকা, ভাই সাজেদ মাতবরকে ২ কোটি টাকা, আরেক ভাই মোহাম্মদ বাসারকে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা, শ্যালক ফুয়াদ হাসানকে ৩৬ লাখ টাকা, ফরিদ হাসানকে ৩৫ লাখ টাকা, মোনাক হোল্ডিংসকে ৬ লাখ টাকা এবং আত্মীয় আলেয়া বেগমকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। মূলত হিরুই তার পরিবারের বিভিন্ন সদস্য ও সুবিধাভোগি প্রতিষ্ঠানের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবগুলোতে লেনদেন করেছেন।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে আবুল খায়ের হিরু শেয়ারবাজারের সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের আনুগত্য পেয়েছেন। এ কারণে ২০২১ সালে কারসাজির এসব ঘটনা উদ্ঘাটিত হলেও শিবলী কমিশন, অর্থাৎ বিএসইসির তৎকালিন চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা দিয়ে রাখেন। ফলে কারসাজির মাধ্যমে কিছু শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে বড় অঙ্কের মুনাফা করেও শাস্তির বাইরে থেকে যান হিরু ও তার পরিবারের সদস্যরা।