নিজস্ব প্রতিবেদক : পুজিবাজারের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউস (ট্রেক নম্বর- ৭৯) পিএফআই সিকিউরিটিজের স্টক-ডিলার এবং স্টক-ব্রোকার রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটের (নিবন্ধন সনদ) নবায়ন স্থগিত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রতিষ্ঠান্টির সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ফলে বিপাকে পরেছেন ব্রোকারেজ হাউজটির বিও হিসাবধারী বিনিয়োগকারীরা।
গতকাল ১৭ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হবার কারণে প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধন সনদ নবায়ন করার জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে আবেদন জানালেও তা গ্রহণ করেনি বিএসইসি। সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ) প্রতিষ্ঠানটির ২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা ঘাটতি থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
আজ (১৮ নভেম্বর) পিএফআই সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মনিটরিং অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান মো. বজলুর রহমান স্বাক্ষরিত সনদ নবায়ন স্থগিত সংক্রান্ত এক চিঠি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নবায়ন স্থগিতের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে পিএফআই সিকিউরিটিজের লেনদেন। ফলে বিপাকে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বিও হিসাবধারী সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিএফআই সিকিউরিটিজের কয়েকজন বিও হিসাবধারী বিনিয়োগকারী এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গতকাল অব্দি আমরা কিছু জানতাম না। সকালে এসে শুনি লেনদেন হচ্ছেনা। বাজারের এই উত্থান-পতন পরিস্থিতে এভাবে আটকে গিয়ে অনেকেই লুজার হবেন।
তারা বলেন, বিএসইসি থেকে ব্রোকারেজ হাউজটিকে বার বার সতর্ক করা হলেও তারা সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি পূরণে কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে সনদ নবায়ন হওয়া নিয়ে সংশয় থাকলেও বিও হিসাবধারীদের কিছু জানায়নি।
ব্রোকারেজ হাউজটির আরেকজন বিনিয়োগকারী জানান, আমার বিনিয়োগকৃত কোম্পানিগুলোর মাঝে একটি কোম্পানির ক্যাটাগরি ডাউন হয়েছে, বোঝাই যাচ্ছে তারা এবার ভালো লভ্যাংশ দিবেনা এবং দর পতনের মুখে পরবে। কিন্তু পিএফআই সিকিউরিটিজে আমার বিও হবার কারণে আমি আজ শেয়ারটি বিক্রি করে বের হতে পারলাম না।
দীর্ঘ দিন যাবত ঘাটতিতে রয়েছে পিএফআই সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাব। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হলেও প্রতিষ্ঠানটি তাদের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের ঘাটতি পূরণ করেনি। এমন পরিস্থিতিতেও বিগত সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী ফরিদউদ্দিন আহমেদ বরাবর পাঠানো বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশন পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের অনুকূলে স্টক-ডিলার এবং স্টক-ব্রোকার নিবন্ধন নবায়ন করার অবস্থানে নেই। কারণ ২১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকের পাওনা হিসাবে ২৮ কোটি ১৮ লাখ ০৫ হাজার ৭০৮ টাকা ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে ১৭ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ কারণে নবায়নের যে আবেদন করা হয়েছে তা গ্রহণ করা হয়নি।
এদিকে গত ১০ সেপ্টেম্বর বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯২০তম কমিশন সভায় পিএফআই সিকিউরিটিজ সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি পূরণের জন্য সময় বৃদ্ধির আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজটির পরিচালকদের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন বন্ধ এবং সকল বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।