স্পোর্টস ডেস্ক : দ্বিতীয় ইনিংসে মেহেদি হাসান মিরাজের লড়াকু ব্যাটিংয়ের পরও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৭ উইকেটে হেরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করলো স্বাগতিক বাংলাদেশ। সতীর্থদের ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় ইনিংসে সাত নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ৯৭ রানের ইনিংস খেলেন মিরাজ। তার লড়াকু ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে ২০২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০৭ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৬ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। জবাবে ২২ ওভারেই ম্যাচ জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
দশ বছর পর এশিয়ার মাটিতে টেস্টে জয়ের দেখা পেল প্রোটিয়ারা। সর্বশেষ ২০১৪ সালে গল-এ শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট জিতেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। পাশাপাশি বাংলাদেশের মাটিতে ২০০৮ সালের পর টেস্ট জিতলো প্রোটিয়ারা। ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই টেস্ট খেলে ড্র করেছিলো সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১০৬ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০৮ রান করেছিলো।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ চতুর্থ দিনের শুরুতেই দ্বিতীয় নতুন বল নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। নতুন বল নিয়েই দিনের তৃতীয় বলে সাফল্য পেয়ে যায় প্রোটিয়ারা। ব্যক্তিগত ১৬ রানে নাইমকে এলবিডব্লিউর ফাঁেদ ফেলেন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার কাগিসো রাবাদা। এই শিকারে ৬৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৫ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয়বারের মত ইনিংসে ৫ উইকেট দখল করেন রাবাদা।
নাইমের বিদায়ে ক্রিজে মিরাজের সঙ্গী হন তাইজুল ইসলাম। রানের চাকা সচল রাখেন তারা। ২০ বলে ১৯ রান আসার পর বিচ্ছিন্ন হন মিরাজ ও তাইজুল। ৭ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ওয়াইন মুল্ডারের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন তাইজুল। ৩০৩ রানে নবম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তখন ৯৭ রানে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ।
টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে থাকা মিরাজের স্বপ্ন ভঙ্গ করেন রাবাদা। স্লিপে মুল্ডারকে ক্যাচ দেন ২১৯ মিনিট ক্রিজে থেকে ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৯১ বলে ৯৭ রান করা মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারে এই প্রথম নার্ভাস নাইন্টিজের ঘরে থামলেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে ২২তম বারের মত কোন ব্যাটার নার্ভাস নাইন্টিজে আউট হলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস খেললেন মিরাজ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৯.৫ ওভারে ৩০৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান টাইগারদের। মিরপুরের ভেন্যুতে সর্বোচ্চ। চতুর্থ দিন সকালে ৪.৫ ওভারে বাকী ৩ উইকেটে ২৪ রান যোগ করতে পারে টাইগাররা।
রাবাদা ৪৬ রানে ৬ উইকেট নেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই ক্যারিয়ার সেরা বোলিং রাবাদার। প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন রাবাদা। ম্যাচে ৭২ রানে ৯ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালের পর দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে এশিয়ার মাটিতে টেস্ট ম্যাচে আট বা তার বেশি উইকেট শিকারী বোলার হলেন রাবাদা। এর আগে সর্বশেষ শ্রীলংকার বিপক্ষে গল টেস্টে ৯৯ রানে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার ডেল স্টেইন। এই ইনিংসে কেশব মহারাজ ৩টি ও মুল্ডার ১টি উইকেট নেন।
১০৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৪২ রানের সূচনা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০ রান করে তাইজুলের বলে বোল্ড হন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক আইডেন মার্করাম।
দক্ষিণ আফ্রিকার রানের গতি ধরে রাখা আরেক ওপেনার টনি ডি জর্জিকে ৪১ রানে থামিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন তাইজুল। ৭১ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ের পথে রাখেন ট্রিস্টান স্টাবস ও ডেভিড বেডিংহাম। দলীয় ৯৭ রানে এই জুটিও ভেঙ্গে বাংলাদেশকে তৃতীয় উইকেট উপহার দেন তাইজুল। ১২ রানে আউট হন বেডিংহাম।
চতুর্থ উইকেটে ৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২২ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিশ্চিত করেন স্টাবস ও রায়ান রিকেলটন। স্টাবস ৩০ ও রিকেলটন ১ রানে অপরাজিত থাকেন। তাইজুল ৪৩ রানে ৩ উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসে ১১৪ রানের সুবাদে ম্যাচ সেরা হন দক্ষিণ আফ্রিকার কাইল ভেরেনি।
এ ম্যাচটি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ ছিলো। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে ৯ ম্যাচে ৩ জয় ও ৬ হারে ৩০.৫৬ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তমস্থানেই থাকলো বাংলাদেশ। এই জয়ে ৭ ম্যাচে ৩টি করে জয়-হার ও ১টি ড্র’তে ৪৭.৬২ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে উঠলো দক্ষিণ আফ্রিকা। তালিকার প্রথম তিনটি স্থানে আছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলংকা।
আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু করবে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা।