মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি : দেশের বাজারে এক কেজি ইলিশের দাম এক হাজার ৭৫০ টাকা। আর ভারতে রপ্তানি হচ্ছে মাত্র এক হাজার ১৮০ টাকা দরে। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। ওইদিন ২০টি ট্রাকে ৫৪ মেট্রিক টন ৪৬০ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৪৫ মেট্রিক টন ২০০ কেজির মতো আউটপাশ হয়েছে। এ নিয়ে দুইদিনে বেনাপোল দিয়ে ভারতে রপ্তানি হলো ৯৯ মেট্রিক টন ৬৬০ কেজি ইলিশ। প্রতি কেজি ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ১০ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি ১ হাজার ১৮০ টাকা দরে।
জানা গেছে, পূজার আগে পদ্মার ইলিশ পেয়ে ভারতীয়রা খুশি হলেও রপ্তানিতে দেশে ইলিশের সঙ্কট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। বর্তমানে দেশীয় বাজারে কেজিতে ইলিশের দাম বেড়েছে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত। বেনাপোল বাজারের মাছের আড়তে পাইকারিতে প্রতি এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৬৫০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে একই আকারের ইলিশ প্রায় ৫০০/৬০০ টাকা কমে ভারতে রফতানি হচ্ছে। প্রতি কেজি ইলিশ ১০ মার্কিন ডলার রপ্তানি মূল্য নির্ধারন করেছে কয়েক বছর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এখনো সেই পরিপত্র অনুযায়ীই রপ্তানি হচ্ছে। তবে ইলিশের দেশীয় বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে দাম সমন্বয় হতে পারে বলে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান।
নাভারণ বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, স্থানীয় বাজারে যেখানে প্রতি কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬৫০ টাকা বিক্রি হয়, সেখানে ভারতে ১০ ডলার বা ১ হাজার ১৮০ টাকা কেজিতে কীভাবে রপ্তানি হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম আকারের ইলিশ গতকাল দেড় হাজার টাকা কেজি বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।
জানা যায়, আগামী ৯ অক্টোবর শুরু হচ্ছে শারদীয় পূজা উৎসব। আর এ পূজা উৎসবে পশ্চিম বাংলার মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এপারের পদ্মার ইলিশ। সারা বছর ধরে তারা অপেক্ষায় থাকে পূজার সময় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসবে, আর তারা অতিথিদের আপ্যায়নে ইলিশের বিভিন্ন রান্না তুলে দেবেন প্লেটে।
বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোলে ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ভারতে দুর্গাপুজা মানে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখা, প্রিয়জনদের সঙ্গে আড্ডা আর জমজমাট খাওয়া দাওয়া। ইলিশ ছাড়া বাঙালির খাওয়া দাওয়া যেন পরিপূর্ণ হয় না। আর দুর্গাপুজোর আগেই ভোজনরসিক বাঙালির কাছে সর্বোৎকৃষ্ট মহরত। রেস্তোরা হোক বা বাড়িতে অষ্টমী বা নবমীর দুপুরে সর্ষে ইলিশ, ইলিশ ভাপা বা ইলিশ পাতুরি, ইলিশ বিরিয়ানি দিয়ে লাঞ্চ না করলে পুজার আনন্দ অনেকটাই মাটি হয়ে যায়। স্বাদে গন্ধে পদ্মার ইলিশের জুড়ি মেলা ভার। এবার বাংলাদেশের ইলিশ আসার কারণে পুজায় ইলিশ রসনায় তৃপ্ত হবে বঙ্গ সমাজ এ কথা বলাই বাহুল্য।
পেট্রাপোল চেকপোস্টের আমদানিকারক রামকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, এখন থেকে প্রতিদিনই কিছু কিছু করে আসতে থাকবে বাংলাদেশের ইলিশ। অবশেষে ইলিশ যে এসে পৌঁছেছে এটাই আনন্দের। গতবারও ইলিশ মাছ পাঠিয়েছিল বাংলাদেশের সরকার। এবার কিছুটা দেরিতে হলেও, বাঙালি এই মাছ পাবে। পুজোর আগে এর থেকে বড় সুখবর আর কী বা হতে পারে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিদর্শক আসওয়াদুল আলম জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ৯ টা পর্যন্ত সময়ে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২০টি ট্রাকে করে ৫৪ মেট্রিক টন ৪৬০ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। আজ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ৪ টা পর্যন্ত সময়ে ১৫টি ট্রাকে ৪৫ মেট্রিক টন ২০০ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এ নিয়ে দুইদিনে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানি হলো ৯৯ মেট্রিক টন ৬৬০ কেজি। রফতানিকৃত ইলিশের ওজন কেজির ওপরে। ইলিশের মান যাচাই করে ভারতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। সন্ধ্যার দিকে যদি আরো কোন ইলিশ মাছের ট্রাক বন্দরে আসে তাদের ভারতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে মোট দুই হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন রয়েছে। তবে রপ্তানিকারকদের আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
এর আগে আসন্ন শারদীয় দূর্গা উৎসবে ২৫ সেপ্টেম্বর ৪৯ জন রপ্তানিকারককে ২৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানিতে ছাড়পত্র দেন অন্তবর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৪৮ জনকে ৫০ মেট্রিক টন করে ও একজনকে ২০ মেট্রিক টন মাছ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়। এই অনুমতির মেয়াদ আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। উৎসবের মৌসুমে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে পদ্মার ইলিশ পৌঁছত। আগের সরকারগুলো একে বলত, ‘উপহারের ইলিশ’। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ভারতে ইলিশ পাঠানো নিয়ে কঠোর মনোভাবের কথা জানায়। পরে অবশ্য অবস্থান পরিবর্তন করেছে তারা।