October 7, 2024 - 3:29 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসারাদেশ ও রাজনীতিসারাদেশকালভার্টের মুখ বন্ধ করায় বগুড়ার ৯ গ্রামের মানুষ পানি বন্দি

কালভার্টের মুখ বন্ধ করায় বগুড়ার ৯ গ্রামের মানুষ পানি বন্দি

spot_img

বগুড়া প্রতিনিধি: সরকারি জায়গা দখল করে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় বর্ষায় পানি বের হতে পারে না। এতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর, রামচরণমুকুন্দ, দড়িমুকুন্দ, কানাইকান্দর, রাজবাড়ী, হাতিগাড়া, আড়ংশাইল, মদনপুর ও কৃষ্ণপুর গ্রামের মসজিদ, ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় ঘরবাড়ি রেখে অন্যজায়গ আশ্রয় নিয়েছে অনেকে। এই জলাবদ্ধতায় সাড়ে ৩ হাজার জমি বিঘা অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকার মানুষদের। বারবার ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, কৃষি কেন্দ্রসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করলেও আশ্বাস ছাড়া মেলেনি কোনো সমাধান।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা বলছেন, জলাবদ্ধতা উত্তরণের পথ খুঁজতে কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান মিলবে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে গ্রামবাসীর দৈনন্দিন কাজেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। গত চার বছর ধরে ওই ৯ গ্রামের কৃষকরা কোনো চাষাবাদ করতে পারছেন না। সাড়ে ৩ হাজার জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা পানির কারণে স্কুলে যেতে পারে না। পানিবন্দি অবস্থায় আছেন অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ। সবচেয়ে বেশি সংকট তৈরি হয়েছে স্থানীয় কৃষি খাতে। সাড়ে ৩ হাজার জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। এতে ওই অঞ্চলের কৃষকদের গত চার বছরে ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ওই এলাকার আড়ংশাইল গ্রামের এক ব্যক্তিগত ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সরকারি জায়গা দখল করে নিয়ে নিজের জমির সঙ্গে একটি পুকুর তৈরি করে। সরকারি জায়গা দখল করায় কালভার্টের মুখ পুকুরের অংশে পরে। জোরপূর্বক কালভাটের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় বর্ষায় পানি বের হতে পারে না। এতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। যে জমিগুলো পানির নিচে তলিয়ে আছে সেগুলোতে গড়ে ১৮ থেকে ২১ মণ বোরো ধান উৎপাদন হতো। ওই ধান বিক্রি করেই তারা সংসার চালাতেন।

এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, ‘৭-৮ বছর ধরে বৃষ্টি হয়ে জলাবদ্ধতায় প্রতিবছর আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকার ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। গরু-ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি পশুপালন করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এছাড়াও আবদ্ধ পানিতে হাঁটাহাঁটি করার ফলে বিভিন্ন রকমের পানিবাহিত রোগ হচ্ছে।’

মদনপুর গ্রামের আশাদুল জানান, ৬০ বিঘা জমি চার বছর ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে। প্রতিবছর গড়ে তিনি ২৫ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তার গ্রামের শতাধিক কৃষকের একই অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা ঠিক না করা গেলে জমি থেকেও অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাবেন। এরই মধ্যে অনেকে আমার মতো আর্থিক কষ্টে ভুগতে শুরু করেছেন।’

মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, স্থানীয় আড়ংশাইল গ্রামে একটি পুকুর তৈরি ও দুটি কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কালভার্টের মুখ খুলে দিয়েছিলাম আবার বন্ধ করেদিয়েছে। তারা মুখ বন্ধ করায় এত মানুষের ভোগান্তি ও ক্ষতি হয়েছে যা বলার মত নয়। তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন, কালভার্টের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমাদের উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার, মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং অন্য প্রতিনিধিরা পরিদর্শন করেছেন। সরকারি প্রকল্প দিয়ে হলেও ৭ দিনের মধ্যে জলাবন্ধ নিরসনে কাজ করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ