কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবারও তাঁর ভাই শামীম ইস্কান্দার আবেদন করেছেন। এর প্রেক্ষিতে মতামতের জন্য আবেদনটি পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ তথ্য জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাই গত দুদিন আগে আমাদের দপ্তরে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন দিয়েছেন। আমরা আইনগত মতামত চেয়ে এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আইনগত মতামত পেলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
এর আগে এ বিষয়ে গত সোমবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে আইনের বিদ্যমান অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১)-এর ধারার ক্ষমতাবলে শর্ত যুক্তভাবে তার সাজা স্থগিত রেখে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায়। এখন আইনের যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে খালেদা জিয়াকে দেওয়া শর্তযুক্ত মুক্তি আগে বাতিল করতে হবে। বাতিল করে আগের অবস্থায় যাওয়ার পর আবার অন্য বিবেচনা করা যাবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আবেদন সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ে করা যায় না। সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে। আইন মোতাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামতের জন্য সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
এদিকে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন দাবি করেন, নানা জটিল রোগে আক্রান্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গত দুইমাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু চিকিৎসায় কোনো উন্নতি নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক জটিলতা বাড়ছে খালেদা জিয়ার। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দেন তিনি।
খালেদা জিয়ার সবশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের জটিলতা বা সমস্যাগুলো এমন পর্যায়ে গেছে যে এখন দেশে চিকিৎসা দিয়ে সেসব সমস্যার উন্নতি আশা করা যায় না। তার লিভার, কিডনিসহ শরীরের প্রত্যঙ্গগুলোর জটিলতা বেড়েই চলেছে।
গত মাসের ৯ তারিখ থেকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদার। কখনো কেবিনে, কখনো সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা চলছে তার। বর্তমানে তাকে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দুটি মামলায় সাজা হওয়ায় কারাবন্দি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত থাকায় তিনি কারামুক্ত রয়েছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায়ের পর তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার সাজা আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন একই আদালত।
২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। এরপর থেকে মুক্তির মেয়াদ বাড়তে থাকায় তাকে আর কারাগারে যেতে হয়নি।