কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনের জন্য ভারত সফরে যাচ্ছেন আগামীকাল শুক্রবার। যেখানে উভয় দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, যোগাযোগ বা সংযুক্তি ও জ্বালানির বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাইমুল ইসলাম খান বলেন, ‘নব নির্বাচিত দুই দেশের দুই নতুন সরকারের মধ্যে দুই দেশের অমীমাংসিত যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
জানা গেছে, দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্ক তারা ভবিষ্যতে কোথায় নিয়ে যেতে চান, তার দিকনির্দেশনা থাকবে বৈঠকে।
আগামী শনিবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি একান্তে বৈঠক হবে। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর অন্তত ১৪টি চুক্তি ও এমওইউ সইয়ের প্রস্তুতি চলছে। সব মিলিয়ে ১০টির বেশি চুক্তি ও এমওইউ সই হতে পারে। এর মধ্যে অন্তত চারটির মেয়াদ শেষে নবায়ন হওয়ার কথা। এসব চুক্তি ও এমওইউ জ্বালানি, সংযুক্তি, অর্থনীতিসহ সহযোগিতার নানা ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ভবিষ্যতে দুই দেশের এই সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যেতে চান, তার একটি দিকনির্দেশনা থাকবে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে। একধরনের রূপকল্পের কথা উঠে আসবে তাদের আলোচনায়। যার ধারাবাহিকতায় ব্যাপকতর অর্থে সংযুক্তি, পরিবেশ, মহাকাশসহ নতুন নতুন কোন ক্ষেত্রগুলোতে ভবিষ্যতে আমাদের সহযোগিতা এগোবে, তার একটা নির্দেশনা থাকবে।’
বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি অভিন্ন নদীর তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি, সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় তুলবে বাংলাদেশ।
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তিস্তা চুক্তিটি যে পর্যায়ে আছে, খুব শিগগির এতে ইতিবাচক কিছু ঘটবে, এমন কোনো পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। তবে আশার দিকটি হচ্ছে, তিস্তা ঘিরে উন্নয়ন প্রকল্প বা সংরক্ষণের বিষয়ে সম্প্রতি ভারত আগ্রহ দেখাচ্ছে।
হাসিনা-মোদি শীর্ষ বৈঠকে এবার যে প্রকল্পগুলোর বিষয়ে ঘোষণা আসার কথা, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু। বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির রামগড়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুমের মধ্যে এই সেতু যোগাযোগ স্থাপন করবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সফরের প্রথম দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পরদিন শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র সালাম গ্রহণ ও গার্ড অব অনার পরিদর্শন করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজঘাটে অবস্থিত মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করবেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে হায়দরাবাদ হাউসে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজ আয়োজনের কথা রয়েছে। বিকেলে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখরের সঙ্গে তার দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখা করবেন।
উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন। এ সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে।
দুদিনের সফর শেষে শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে দিল্লির পালাম বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হচ্ছেন যারা
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে আসছেন। এছাড়া লক্ষণীয় হলো, বাংলাদেশের ইকোনমিক রিলেশনস (অর্থনৈতিক সম্পর্ক) বিভাগের সচিব মহ. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকিও এই সফরের প্রতিনিধি দলে থাকছেন।
এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা থাকছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—পাওয়ার ডিভিশনের (বিদ্যুৎ বিভাগ) সিনিয়র সচিব মহ. হাবিবুর রহমান, রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মহম্মদ হুমায়ুন কবীর, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (সেনাবাহিনী) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বাহিনীর অপারেশনস ও প্ল্যান ডিরেক্টরেটের কর্নেল মহম্মদ তরিকুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক এটিএম রকিবুল হক ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও যথারীতি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন। সূত্র আরটিভি
পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ছাড়াও অন্য যে মন্ত্রী বা মন্ত্রী পর্যায়ের সদস্যরা শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লিতে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহও ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে এবারের দিল্লিযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন। এছাড়া প্রতিবারের মতোই বাংলাদেশের সিনিয়র সম্পাদক ও সাংবাদিকদের একটি দলও প্রধানমন্ত্রীর সফর ‘কভার’ করতে দিল্লিতে আসছেন।