সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী ২০০০ সালে এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে অবসরে যান। এরপর পর্যটন নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হন। গড়ে তুলেছেন টাইগারস ট্যুরস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পর্যটন শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রকাশিত সাক্ষাৎকার নিম্নে তুলে ধরা হল –
প্রশ্ন: দেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা সম্পর্কে বলুন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ শিল্প কতটুকু অবদান রাখছে?
আব্দুল মুয়ীদ: দেশে পর্যটন শিল্পের অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এ দেশের মতো এত বৈচিত্র্য পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় বদ্বীপ। পাহাড়, সমুদ্র, সুন্দরবনের মতো বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই বৈচিত্র্যময়। এ বৈচিত্র্য বিশ্বের কাছে কখনোই তুলে ধরা হয়নি। কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আয়ের দিক থেকে পর্যটন এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিল্প। এ খাতের মতো এত ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ অন্য কোনো খাতে নেই। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঐতিহ্যগতভাবে প্রত্নতাত্তি্বক দিক থেকে আমাদের ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ। পর্যটকরা এসব বিষয় জানতে ও দেখতে আসেন। দেশের অনেক অগ্রগতি হলেও পৃথিবীর মানুষ তা জানে না। আমাদের যা আছে, সেটাকে তুলে ধরতে হবে। এ কাজ করতে হবে সরকারকেই।
প্রশ্ন: পর্যটন শিল্প কতটুক এগিয়েছে?
আব্দুল মুয়ীদ: ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। তবে শ্রীমঙ্গল, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটিসহ নির্দিষ্ট কিছু জায়গাতেই পর্যটকরা ঘুরেফিরে বেশি যাচ্ছেন। এসব জায়গায় কিছু সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠেছে। এর বাইরে উত্তরাঞ্চলে যাচ্ছেন অনেকেই। সুন্দরবন সম্পর্কে আগ্রহ বেড়েছে। আরও অনেক আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট রয়েছে। এসব স্থানে অবকাঠামো সুবিধা বাড়াতে হবে।
প্রশ্ন: পর্যটন শিল্প বিকাশে বাধাগুলো কী? তা উত্তরণের উপায় কী?
আব্দুল মুয়ীদ: অবকাঠামো দুর্বলতা বড় প্রতিবন্ধকতা। পর্যটনের বিকাশ করতে হলে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে হবে। কর প্রণোদনা দিতে হবে। তা হলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন। পর্যটন উন্নয়নে যে ধরনের মনমানসিকতা থাকা দরকার, তা এখনও তৈরি হয়নি।
প্রশ্ন: পর্যটন খাত উন্নয়নে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সরকারের কী করতে হবে।
আব্দুল মুয়ীদ: দর্শনীয় স্থানে যাতায়াতের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। যেখানে বেসরকারি উদ্যোক্তারা যাবেন না, সেখানে সরকারকে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননও ট্যুরিজম বোর্ড খাতের উন্নয়নে চেষ্টা করছেন। এককভাবে ভালো কিছু সম্ভব নয়। পর্যটনের বিকাশে অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন: গুলশানে জঙ্গি হামলার পর পরিস্থিতির কতটুকু উন্নতি হয়েছে?
আব্দুল মুয়ীদ: এ ঘটনায় পর্যটন খাতের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। আরও সময় লাগবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সব দেশেই আছে। কিন্তু আমাদের এখানে তা সংঘাতময়। বৈরী পরিবেশ এ শিল্পের জন্য সহায়ক নয়।
প্রশ্ন: আপনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে পর্যটন শিল্পে কাজ করতে আগ্রহী হলেন কেন?
আব্দুল মুয়ীদ: বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে বার্লিনে আন্তর্জাতিক ট্যুরিজম ফেয়ারে অংশ নিই। সেখানে দেখলাম বাংলাদেশ সম্পর্কে খুব কম লোকই জানে। এর কারণ, বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালোভাবে তুলে ধরা হয়নি। তখন থেকেই পর্যটন নিয়ে কাজ করার আগ্রহ জাগে। বলা যায় শখের বশে আসা। আমরা মূলত নদীকেন্দ্রিক পর্যটন (রিভার ট্যুরিজম) করি। নদী আমাদের বড় সম্পদ। একে যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না।
প্রশ্ন: অবকাঠামো উন্নত হলেই কি বিদেশি পর্যটকরা আসবেন?
আব্দুল মুয়ীদ: না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পর্যটন শিল্প বিকাশে খুবই জরুরি। জঙ্গি মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। এর সুফল আসবে। সন্ত্রাসী হামলার পরও ফ্রান্সে পর্যটন আসা বন্ধ হয়নি। এর কারণ, ওখানকার পুরো পরিবেশটাই পর্যটনবান্ধব। দু-এক বছরে বাংলাদেশ পর্যটনের স্বর্গরাজ্য হবে, তা বলছি না। চিন্তা করতে হবে দীর্ঘ মেয়াদে। মালয়েশিয়ায় এক সময় কিছুই ছিল না। পর্যটন আকর্ষণে নানা উদ্যোগ নেওয়ায় প্রচুর পর্যটক যাচ্ছেন সেখানে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে তুলে ধরতে হলে কী করতে হবে?
আব্দুল মুয়ীদ: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ দেশের বৈচিত্র্য তুলে ধরতে হবে। বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বকে নিয়ে এসে ঘুরিয়ে দেখাতে হবে। ট্যুরিজম বোর্ড এ বিষয়ে কিছু করলেও তা যথেষ্ট নয়। এদিকে বেশি নজর দিতে হবে।