রকিবুর রহমান: হ্যাঁ, আমি তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করছি। পুঁজিবাজার আগের চেয়ে স্থিতিশীল যারা এমন ভাবছেন, তাদের ধারণা ঠিক। একটু লক্ষ করলে দেখবেন এখন কিন্তু অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ক্রয়যোগ্য রয়েছে। অতিমূল্যায়িত শেয়ার এখন নেই বললেই চলে। আমি মনে করি, এই বাজারে দেখেশুনে বিনিয়োগ করলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
রকিবুর রহমান: বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতে পারি, পুঁজিবাজারে আবারও ধারাবাহিক পতন নেমে আসবে এমন শঙ্কা নেই। কারণ বাজার পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে। কিছুদিন আগে বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল; তখন কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এটা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। যখন শেয়ারদর কিছুটা কমছে, তখনই কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। তাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বাজারের যেমন উত্থান রয়েছে, তেমনি পতনও রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত, বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা। পুঁজিবাজার ধৈর্যের জায়গা, এটা ভুলে গেলে চলবে না।
রকিবুর রহমান: বিনিয়োগকারীদের আগে বহুবার বলেছি দুর্বল কোম্পানির শেয়ার থেকে দূরে থাকতে। বলেছি, এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ লাভের চেয়ে ঝুঁকির শঙ্কা বেশি থাকে। কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেননি। কেউ যদি কথা না শোনেন, তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। তবে এ কথা ঠিক, অতিমূল্যায়িত না হলেও কিছু ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারদর চোখে পড়ার মতো হারে বাড়ছে। আমি মনে করি, বিনিয়োগকারীদের এসব কোম্পানি থেকেও দূরে থাকা উচিত। কারণ এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। জেনে-বুঝে এমন ভুল করা উচিত নয়।
রকিবুর রহমান: ব্যাংকিং খাত হচ্ছে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন অনেকে। ফলে শেয়ারদরও তলানিতে চলে যায়। এখন সে পরিস্থিতি পাল্টেছে। তাছাড়া বর্তমানে মুনাফায় রয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক। খাতটির গড় মুনাফার হারও আগের চেয়ে বেড়েছে। সে কারণে এ খাতে ঝুঁকেছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থতি ভালো থাকায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকিং খাতে। সব মিলে এ খাতের অবস্থা সন্তোষজনক।
রকিবুর রহমান: এ কথা ঠিক, আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে সব সময় নানান গুজব ভেসে বেড়ায়। আর এটাকে সংবেদনশীল তথ্য মনে করেন কিছু বিনিয়োগকারী। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, কোম্পানি যখন লিগ্যালি কোনো ঘোষণা না দেয়, তখন পর্যন্ত কোনো তথ্যই সংবেদনশীল তথ্য হতে পারে না। ফলে অন্যের কাছে পাওয়া কোনো তথ্যই সংবেদনশীল তথ্য হতে পারে না। তাই কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দেখে বিনিয়োগ করা উচিত। কথা হচ্ছে, যার পুঁজির নিরাপত্তা তাকেই দিতে হবে।
রকিবুর রহমান: আপনারা জানেন, স্বল্প পুঁজির কোম্পানি নিয়ে আলাদা মার্কেট তৈরি প্রক্রিয়াধীন। এ মার্কেট হলে সেখানে স্বল্প পুঁজির মূলধনের কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে পারবে। অন্যদিকে যে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তালিকাভুক্ত, তাদের পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। অচিরেই তা নিয়ে বিএসইসি এবং কোম্পানি সচিবের সঙ্গে আলোচনা করবো। তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকার কম হতে পারবে না।
রকিবুর রহমান: পুঁজিবাজারে এখনও অধিকাংশ কোম্পানিতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সে সঙ্গে স্থিতিশীল পরিবেশ বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করছে। যে কারণে বাড়ছে বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা। অন্যদিকে ব্যাংকে আমানতে সুদহার অনেক কমে যাওয়ায় জনগণ পুঁজিবাজারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমি মনে করি, দেখে-শুনে বিনিয়োগ করলে পুঁজিবাজার থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত মত।
রকিবুর রহমান: আমি মনে করি, পুঁজিবাজারে নতুন-পুরোনো সব বিনিয়োগকারীরই মৌলভিত্তির কোম্পানিতে থাকা উচিত। তবে নতুনদের এ ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকা দরকার। তাদের উচিত, বিনিয়োগের আগে পুঁজিবাজার নিয়ে ভালো ধারণা নেওয়া। এর জন্য পড়াশোনাসহ কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানা দরকার। একজন নতুন বিনিয়োগকারী যদি জেনে-বুঝে ভালো ধারণা নিয়ে পুঁজিবাজারে আসেন, তাহলে পুরোনোদের চেয়েও ভালো করার সুযোগ থাকে।
রকিবুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।