ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ ভারতের সাথে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক ছাড়া বাংলাদেশের চারিদিকেই রয়েছে ভারত। ভৌগলিকভাবে এরকম ঘনিষ্ঠ হবার কারণেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রায় ৫২টি অভিন্ন নদী রয়েছে। তাই দুই দেশের পারস্পারিক সম্পর্কের মধ্যে পানি বন্টনের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর কারণ দুই দেশের জনসংখ্যার বড় অংশই কৃষিকাজে নিয়োজিত। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৫ বছর পরেও ভারতের সাথে পানি বন্টনের বিষয়টির তেমন কোন সুরাহা হয়নি। ১৯৯৬ সালে শুধু গঙ্গা পানি চুক্তি ছাড়া আর কোন পানি চুক্তিতে স্থায়ী সমাধানে যেতে পারেনি এ দুই দেশ। আর এজন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ এ বিষয়টি নিয়ে একটি স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে চাচ্ছে। তাই আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা পানি বন্টনের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে।
যদিও প্রধানমন্ত্রীর এ মাসেই ভারত সফরে যাবার কথা ছিল কিন্তু তা স্থগিত করে ফেব্রুয়ারিতে যাবার আশা করা হচ্ছে। অনেক কূটনৈতিক বিশ্লেষক এমনও মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এরকম পেছানোর অন্যতম কারণ এ পানি বন্টন চুক্তির বিষয়ে সমঝোতার উপরে গুরুত্বারোপ করা। সঙ্গত কারণেই বলতে হয়, পানির বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের এ রকম সচেতনতা অবশ্যই ইতিবাচক। ভারত সরকারকে পানির বিষয়টি নিয়ে একটি সমঝোতায় আসতে বাংলাদেশকেই আহ্বান জানাতে হবে বলে আমরা মনে করি। কারণ এখানে বাংলাদেশের পাওনার অনেক হিসাবও রয়েছে।
তিস্তা চুক্তিটি নিয়ে এর আগেও বাংলাদেশের সাথে ভারতের কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বার বার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে এ বিষয়ে কোন সুরাহা হতে পারেনি। ২০১১ সালে এ চুক্তি নিয়ে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনাও হয়। মনমোহন সিং এর ঢাকা সফরের সময় এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার কথা থাকলেও মমতার আপত্তির কারণে আর স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়নি।
তিস্তা পানি চুক্তিতে দুই দেশেরই একটি সমঝোতায় যাওয়া জরুরি। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী এ দেশের কৃষিকাজেরও অন্যতম প্রধান শক্তি। এ কারণেই ভারতের সাথে বাংলাদেশের পানি বন্টনের চুক্তিতে স্থায়ী সমাধানে আসাটা অত্যন্ত জরুরি। তবে বাংলাদেশকে তার সঠিক পাওনার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানে থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে আমরা আশাবাদি একারণে যে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এ বিষয়ে তাঁর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের যেসব দেনা-পাওনার হিসাব রয়েছে তার মধ্যে পানির বিষয়টি নিয়ে দুই দেশকেই এগিয়ে আসতে হবে। দুই দেশ অন্য কোন বিষয়ে পারস্পারিক সমস্যা না বুঝতে চাইলেও নদীর বিষয়টি নিয়ে অন্তত বুঝা উচিত। নদীর বিষয়টির সাথে শুধু কৃষি নয়, আবহাওয়া-জলবায়ু থেকে শুরু করে মানুষের জীবন ধারণের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় পানির চাহিদার বিষয়টিও সম্পর্কিত। তাই দুই দেশকেই পারস্পারিক মানবিক দিকটিও বিবেচনা করতে হবে। নদীর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে যেমন ভারতেও তার প্রভাব পড়বে তেমনি ভারতেরও কোন সমস্যা হলে বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়বে। তাই এ বিষয়টি নিয়ে দুই দেশ একটি স্থায়ী যৌক্তিক সমাধানে এগিয়ে আসুক- এ রকমটিই আমাদের প্রত্যাশা।