স্পোর্টস ডেস্ক : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নারীদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা নিয়ে ভুল স্বীকার করেছেন তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। বিসিবির পক্ষ থেকে ভবিষ্যতের জন্যও এই ক্রিকেটারকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মিরপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিসিবির এই কর্মকর্তা।
সদস্য সমাপ্ত এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হয় পেসার তানজিম হাসান সাকিবের। আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেকেই ৮ বলে অপরাজিত ১৪ রান করার পর নিয়েছেন ২ উইকেট। এরপর শেষ ওভারে প্রবল চাপের মুখে দারুণ বোলিংয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। এমন দারুণ নৈপুণ্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমর্থকদের প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন ২০ বছর বয়সী তরুণ এই পেসার।
কিন্তু সব ছাপিয়ে তানজিম সাকিবের পুরনো কিছু ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়ে নতুন মাত্রা যোগ করে। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মাঠে দুর্দান্ত পারফর্ম করা তানজিম সাকিব পুরনো ফেসবুক পোস্ট নিয়ে ভুল স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় তরুণ এই পেসারকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর তরফ থেকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
সাকিবের বিষয়ে গণমাধ্যমে জালাল ইউনুস আরও বলেন, ‘সে (সাকিব) বলেছে- ‘আমি দুঃখিত’। আমরা সতর্ক করেছি ভবিষ্যতে যেন এমন পোস্ট না দেয়া হয়। সে বলেছে, এ ধরনের পোস্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবে। সাকিব বলেছে, সে নারী বিদ্বেষী নয়, আমার মা-ই তো একজন নারী। আমি কীভাবে নারী বিদ্বেষী হতে পারি! সাকিব কেমন ধ্যানধারণার অনুসারী, মানসিকতা কেমন অবশ্যই এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তাকে পর্যবেক্ষণ করবো।’
বিসিবির এই পরিচালকের দাবি, তার পরিবারও এ ব্যাপারে খুবই শঙ্কিত। এমন পরিস্থিতি তারাও আশা করেনি। তারাও দুঃখিত। সামনে বিশ্বকাপ আছে, সে তরুণ ছেলে, বয়স কম। এজন্য তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও ওরকম কিছু যদি থাকে তাহলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
এর আগে গণমাধ্যমকে তানজিম সাকিব বলেন, ‘আল্লাহ তো কুরআনে বলেই দিয়েছেন আমি জিন এবং মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি আমার এবাদতের জন্য। ক্রিকেট আমার পেশা, আমি এখান থেকে ইনকাম করি। আমার তো মেইন জীবনটা অফলাইনের জীবন। মৃত্যুকে সকলেরই মোকাবিলা করা লাগবে। কখন কে মারা যাবে, কেউ কিছু জানে না। আমি পরকালে সফল হতে না পারলে তো শেষ পর্যন্ত ব্যর্থই থেকে যাব। সুতরাং সেই হিসেব করে আমি ইসলামকে মেনে চলার চেষ্টা করি। চেষ্টা করি সবসময় ইসলামের মধ্যে থাকার জন্য। আর এই জিনিসটি আমাকে খেলার মধ্যেও অনেক সাহায্য করে।’
বাংলাদেশের তরুণ এই ক্রিকেটার আরও বলেন, ‘ইসলাম আমাকে শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে সাহায্য করে। তাতে মানসিকভাবে আমি শক্ত থাকতে পারি। আমার মানসিকতা অন্যদিকে যায় না। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিজের মানসিকতা ধরে রাখতে পারি। সুতরাং এটি আমাকে দুনিয়া এবং আখিরাত- দুইদিক থেকেই সাহায্য করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সতীর্থরা আমার এই বিষয়টা খুবই পজিটিভলি নেয়। যখন তারা কোনো জিনিস না বুঝে, বা ইসলামী কোনো একটা জিনিস জানার চেষ্টা করে তখন আমাদের দুজনের কাছেই আসে (সতীর্থ মোহাম্মদ মৃত্যুঞ্জয় ও তানজিম সাকিব)। সেই বিষয়গুলো আমাদের জানা না থাকলে আমরা জেনে তাদের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি।’
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেছিলেন তরুণ এই পেসার। মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার একটি পোস্টকে ঘিরেই এই বিতর্কের সূত্রপাত। সেই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়। স্ত্রীকে যেই স্বামী বলে- আমার স্ত্রীর চাকরি করার দরকার নেই। আমি যা পাই তোমাকে খাওয়াব, সে তাকে রাজরানি হয়ে আছে। এখন সে রাজরানি না হয়ে কর্মচারী হতে চায়। আসলে স্ত্রী স্বামীর মর্যাদা বোঝেনি, স্ত্রী নিজের মর্যাদাও বোঝেনি। ঘর একটি জগৎ।
পোস্টের শেষে বলা হয়েছে, ‘অতএব মা-বোনেরা নিজের আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে স্বামীর আনুগত্য ও বাসায় অবস্থান করে রানির হালাতে অবস্থান করুন। অতএব মা-বোনেরা দুনিয়া কামাতে যেয়ে আখেরাত না হারিয়ে ঘরে অবস্থান করে স্বামী-সন্তানের খেদমত করে দুনিয়া ও আখেরাত দুটিই কামাই করতে পারবেন ইনশা আল্লাহ।’
তবে পোস্টটির শেষে একটি মাইক্রোফোনের ইমোটিকনসহ ‘শায়খ আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া (হাফিযাহুল্লাহ)’ নাম লেখা দেখা যায়।
তানজিমের এই পোস্টের স্ক্রিনশট এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পোস্টটি এখন আর তানজিমের ফেসবুক পেজে পাওয়া যাচ্ছে না।