আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে ‘দাবতে থাকা’ হিমালয় অঞ্চলের ছোট শহর জোশীমঠ থেকে চার হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের এ শহরের ৪৫ হাজার ভবনের মধ্যে ৬৭০টিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে, স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হবে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর মধ্যে মন্দির ও একটি রোপওয়ে আছে।
কর্মকর্তারা জানান, ভূমি অবনমনের সম্ভাব্য বিপদের মাত্রা বিবেচনায় শহরটিকে ‘ডেঞ্জার’, ‘বাফার’ ও ‘পুরোপুরি নিরাপদ’ এ তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। ‘ডেঞ্জার’ অংশটি ৩৫০ মিটার প্রশস্ত। এ অংশের রাস্তা ও ফুটপাতে বড় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। দুটি হোটেল ভবন একে অপরের ওপর ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ও নলকূপগুলো দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, শহরটিকে দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে এর ভেতরে ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের নির্মাণকাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে শহরটি রক্ষার আবেদন জানিয়েছেন। তাছাড়া, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্য সরকারকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
এরই মধ্যে বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সচিব ড. ধর্মেন্দ্র সিং গাঙ্গওয়ারের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কেন্দ্রীয় দল দেহরাদুনে পৌঁছেছে ও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাপ নিরূপণে সমীক্ষা চালাচ্ছে জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এনডিআরএফ) ও স্থানীয় প্রশাসন।
গত ২ জানুয়ারি স্থানীয় সময় ভোরে বিকট শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায় জোশীমঠের স্থানীয় বাসিন্দা প্রকাশ ভোতিয়ালের (৫২)। পরে লাইট জ্বালিয়ে নবনির্মিত দোতলা ভবন ঘুরে দেখেন, ১১টি ঘরের মধ্যে ৯টির দেওয়ালে ফাটল।
ভোতিয়াল বলেন, বাড়িতে ফাটল দেখতে পাওয়ার পর থেকে আমরা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকি। খুব সামান্য শব্দেও আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা দুর্গা প্রাসাদ সাকলানির (৫২) ছোট তিন রুমের বাড়ির দেওয়াল ও মেঝেতেও ফাটল দেখা দেয়। পরে স্থানীয় কর্মকর্তারা তাদের যৌথ পরিবারের ১৪ সদস্যকে স্থানীয় একটি হোটেলে নিয়ে রাখেন।
দুর্গা প্রাসাদ বলেন, দিনের বেলা আমরা দাবতে থাকা বাড়িটি দেখতে যাই। সেখানে এখনো খাবার রান্না করি ও উঠানে গরুগুলো খেতে দিই। এরই মধ্যে বাড়িটি অন্তত দুই ফুট দেবে গেছে। দেওয়ালগুলো কোনোরকমে কাঠের গুঁড়ি দিয়ে ঠেকা দিয়ে রেখেছি।
জোশীমঠের এ পরিস্থিতির জন্য বিশেষজ্ঞরা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নকে দায়ী করেছেন। অনেকে এজন্য ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশনের (এনটিপিসি) জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দায়ী বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত মাসে তারা এনটিপিসি প্রকল্পের সুড়ঙ্গগুলোর ভেতরে ঘটানো বিস্ফোরণগুলোর প্রভাব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে তিনবার চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়, শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে ওইসব বিস্ফোরণ ঘটানোয় ঘরবাড়ি ও রাস্তায় ফাটল তৈরি হচ্ছে।
কিন্তু এনটিপিসি তাদের প্রকল্প ও জোশীমঠের পরিস্থিতির মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছে। এক দাপ্তরিক বিবৃতিতে তারা বলেন, এনটিপিসির সুড়ঙ্গ শহরটির নিচ দিয়ে যায়নি ও বর্তমানে সেখানো কোনো বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে না।
জোশীমঠকে দেবতা বদ্রিনাথের ‘শীতকালীন আসন’ বলে বিবেচনা করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। প্রতি শীতে বদ্রিনাথ শহরের প্রধান মন্দির থেকে বদ্রিনাথ দেবতার মূর্তি নিচে জোশীমঠ শহরের বাসুদেবা মন্দিরে নামিয়ে আনা হয়। একই সঙ্গে শহরটি শিখদের পবিত্র মন্দির হেমকুণ্ড সাহিবে যাওয়ার প্রধান পথ।
আবার উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার এ শহরটি ‘গেটওয়ে অফ গাড়োয়াল’ নামেও পরিচিত। শহরটি ধর্মীয় তীর্থযাত্রী-পর্যটক ও পর্বতারোহীদের কাছে খুবই প্রিয়। সূত্র: এনডিটিভি, বিবিসি