জাকির হোসেন আজাদী: বিটিভি’র ‘অন্তরের গান’ অনুষ্ঠানে গাইলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন এর একমাত্র কন্যা বতর্মান সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ইয়াসমিন ফায়রুজ (বাঁধন)।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর, ২০২২) বিটিভি’র ‘অন্তরের গান’ সংগীতানুষ্ঠানের জন্য “নিরব কেনো থাকো” শিরোনামে একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। এই বিষয়ে শিল্পী বাঁধনের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়। তখন তিনি তাঁর সঙ্গীত জীবনের নানা বিষয় তুলে ধরেন।
কণ্ঠশিল্পী বাঁধন বলেন, “আমি গান খুব ভালবাসি। গান আমার রক্তের সাথে মিশে আছে। ছোটবেলা থেকে মায়ের গান শুনে শুনে শিল্পী হওয়ার অদম্য বাসনা মনে লালন করতাম।
২০২১ সালে বিটিভি’র সঙ্গীতানুষ্ঠানে এ প্রজন্মের বিশিষ্ট গীতিকার মো. হাবিবুল্লাহ এর লেখা ‘না চাইলে মন, রঙিন হয়না, অনেক পেয়েও কিছু মন সুখি হয়না, একটি মৌলিক গান পরিবেশনা করি। গানটি বিটিভিতে প্রচারের পর বহু দর্শক শ্রোতার কাছে ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে ছিল। গানটি বিটিভিতে প্রচারের পর অনেক দর্শক শ্রোতার প্রশংসা পেয়েছিলাম। গানটি সুর করেছিলেন বিশিষ্ট গুণী সংগীত পরিচালক লোকমান হাকিম। গীতিকার মো. হাবিবুল্লাহর লেখা গান গাইতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কারণ তাঁর গানের কথার মাঝে নির্ভেজাল মৌলিকত্ব খুঁজে পাই। গত ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে আমার কণ্ঠে গীতিকার মোঃ হাবিবুল্লাহর লেখা আর একটি গান বিটিভিতে ধারণ করা হয়েছে। গানের কথা ‘নিরব কেন থাকো, আমার ডাকে তুমি দাওগো সাড়া, কি করে আমি বাঁচবো বলো, তোমাকে ছাড়া’। গানটির সুর করেছেন মেধাবী শিল্পী ও সুরকার ইউনুস আলী মোল্লা।
৬টি গান সাজানো বিটিভি’র ‘অন্তরের গান’ অনুষ্ঠান প্রচার হবে আগামী ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ সকাল ৮টার বাংলা সংবাদের পর। উপস্থাপনা করেছেন অর্চি রহমান। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছেন শাহজালাল সরদার শিমুল।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন কণ্ঠশিল্পী বাঁধনের মা। মায়ের অনুপ্রেরণা ও নিজের প্রবল ইচ্ছায় সংগীতাঙ্গনে এসেছেন তিনি। জীবনের প্রথম অ্যালবামটিও সাজিয়েছিলেন মায়ের সঙ্গে দ্বৈত গান দিয়ে। ঈদ উপলক্ষে যা প্রকাশ হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ” আমি নিজের মতো করে কাজ করে যাচ্ছি। আমার ওপর যেটা প্রভাব পড়ে, কোনো অনুষ্ঠানে গাইতে গেলে শ্রোতারা আমার কণ্ঠে মায়ের গানই বেশি শুনতে চায়। যেহেতু মায়ের গান শুনে শুনেই বড় হওয়া, আমিও স্বাচ্ছন্দ্যে গাইতে পারি। কিছুদিন আগে একটি শোয়ে গিয়েছিলাম। সেই শোয়ে ১০-১২টার মতো গান গেয়েছি। সেখানে আমার গানসহ আম্মার গানই বেশি গাইতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ” সাবিনা ইয়াসমিনের গান যে কোনো কণ্ঠশিল্পীর গাওয়াই তো বিরাট ব্যাপার। এক্ষেত্রে বলব, আমি খুবই সৌভাগ্যবান। আমি যখন আম্মার গান গাই, তারপর শ্রোতারা আমার কণ্ঠে আরও বেশি শুনতে চান। এমনও হয়েছে, আমাকে এসে শ্রোতারা
বলেন, আপনার কন্ঠে গান শুনলাম নাকি সাবিনা
ইয়াসমিনের কণ্ঠে, সেটি তো বুঝতেই পারলাম না।
তিনি বলেন, ” ওস্তাদ অনিল কুমার সাহার কাছে আমার গানে হাতেখড়ি। উনার কাছে দীর্ঘদিন ক্লাসিক্যাল শিখেছি। আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, তখন থেকে গান শেখা শুরু। তারপর ক্লাস নাইনে উঠে পড়ালেখার জন্য দেশের বাইরে চলে যাই। সেখানেও আমি গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করতাম।
তিনি বলেন, ” আমার প্রথম অ্যালবাম ‘প্রতিচ্ছবি’ ২০০৬ সালে প্রকাশ করে ইমপ্রেস অডিও ভিশন। সেই অ্যালবামে চারটি গান ছিল আম্মার সঙ্গে ডুয়েট। আর চারটি ছিল আমার একক। আর চারটি ছিল আম্মার একক। ‘প্রতিচ্ছবি’ অ্যালবামের গানগুলোর সাড়া এখনো পাই। এরপর আমার পূর্ণাঙ্গ একক অ্যালবাম ‘ফাল্গুনী হাওয়া প্রকাশ হয় ২০০৯ সালে। ২০১১-তে একটি ভিন্ন আয়োজনে বাংলাদেশের সঙ্গীত জাদুকরখ্যাত সুরস্রষ্ঠা শেখ সাদী খানের সংগীতায়োজনে পাঁচটি রাগের ওপর গান নিয়ে অ্যালবাম ‘রাগ-অনুরাগ” প্রকাশ করি। এই অ্যালবামে আমার খালাতো বোন (ফৌজিয়া খান ও মোবারক হোসেন খানের মেয়ে) রীনাত ফৌজিয়া মোট পাঁচটি রাগের ওপর সেতারের পিছ বাজিয়ে ছিলেন। মূলত যে পাঁচটি রাগের ওপর আমি গান করেছি সেই রাগগুলোর ওপর সে সেতারের পিছ বাজিয়েছিল। ও খুব ভালো সেতার বাজায়।
২০১৭ সালে সিডি ভিশন থেকে অনলাইনে “আবার দু’জনে” শিরোনামে আমার আর একটি এ্যালবাম প্রকাশ পায়। এই এ্যালবামে মোট ১০টি গান ছিল। যার মধ্যে আমার মৌলিক গান ৭টি। বাকি ৩টি আমার মায়ের সাথে ডুয়েট ছিল। তাছাড়াও বতর্মানে আমি ছায়াছবির গান, ইউটিউবের গান, বিভিন্ন টেলিভিশনের সঙ্গীতানুষ্ঠান ও স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি।
সবশেষে তিনি তাঁর দর্শক শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ” বেশি বেশি বাংলা গান শুনুন। বাংলা গানের সাথে থাকুন। আমার জন্য দোয়া করবেন যেনো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গান গেয়ে যেতে পারি। আমার আম্মার জন্য দোয়া করবেন যেনো আরও বহুদিন গান গেয়ে যেতে পারে। সবাই ভালো থাকবেন। অনেক ভালো। শুভকামনা।