অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক করিডোর কাজে লাগানো গেলে ২০৫০ সাল নাগাদ নতুন করে ৭ কোটি ১৮ লাখ কর্মসংস্থান হবে। বাণিজ্য সুবিধা বেড়ে ২৮৬ বিলিয়ন ডলার হবে, যা বাংলাদেশের চিত্র বদলে দেবে।
বুধবার (২৩ আগস্ট) ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডোর ডেভেলপমেন্ট হাইলাইটস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উস্থাপন করেন সুন চ্যাং হোং। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছি। ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ করছি। ঢাকার চারপাশের উন্নয়ন করছি। ঢাকাকে বাইপাস করে সড়কের কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা থেকে এখন ঢাকায় আসতে নৌকায় উঠতে হয় না। সরকার ব্যবসাবান্ধব। সরকার ব্যবসা আরও সহজ করছে। সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা ফ্লাইওভার চার হাজার কোটি টাকায় নির্মাণ করছি। এর মাধ্যমে দেশের বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়বে।
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নানা কাজে পাশের বাড়ি (ভারত) যেতেই হবে। এটা করলে লাভ হবে। ভুটান-ভারতের সঙ্গে কানেক্টিভিটি (সংযোগ) করছি। এটা আমাদের প্রয়োজনে করছি, আামাদের বন্ধু দরকার। আমাদের প্রয়োজন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা।
দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে বর্তমান সরকারের পাশে থাকতে হবে জানিয়ে এম এ মান্নান বলেন, দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। তাহলে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ ভালো থাকবে। শেখ হাসিনা কাজ করছেন, তাকে আরও সুযোগ দিতে হবে। শেখ হাসিনাকে যত বেশি সুযোগ দেবে, দেশ তত বেশি এগিয়ে যাবে।
এডিবির প্রতিবেদনের বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক করিডরের সুবিধা কাজে লাগানো গেলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ৭ কোটি ১৮ লাখ কর্মসংস্থান হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে হবে ৪ কোটি ৬২ লাখ কর্মসংস্থান এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ১ কোটি ২৭ লাখ কর্মসংস্থান হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বাড়বে ২৮৬ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার অংকে ৩১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। যদি করিডোর সুবিধা ব্যবহার করা না যায়, তাহলে ২০৫০ সালে কর্মসংস্থান হবে ৩ কোটি ১১ লাখ।
২০৩০ সালে সুবিধা ব্যবহার করা না গেলে ১ কোটি ৭০ লাখ, আর ব্যবহার করা গেলে হবে ২ কোটি ৩৪ লাখ কর্মসংস্থান হবে। ২০৩৫ সালে সুবিধা কাজে না লাগানো গেলে ২ কোটি ১০ লাখ, সুবিধা কাজে লাগালে হবে ৩ কোটি ৪৭ লাখ কর্মসংস্থান। এছাড়া ২০৪০ সালে কর্মস্থান হবে ২ কোটি ৪৮ লাখ। তবে করিডোর সুবিধা কাজে লাগানো গেলে হবে ৪ কোটি ৬২ লাখ কর্মসংস্থান।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, যোগাযোগের উন্নয়ন করলে উন্নয়ন হয়, এটা সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। উত্তরাঞ্চল তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। দুই যুগের বেশি সময় আগে উত্তরাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলেও এখনো দেশের দেশের সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল উত্তরবঙ্গ।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী বলেন, যে সম্ভাবনার কথা বলছি, তা কার্যত আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। উৎপাদন বিপণন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে করিডোর সমস্যা। এর উন্নয়ন যে গতিতে কাজ হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা ভালো ফল বয়ে আনছে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজার রহমান ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনের (বেজা) চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী।


