আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। সবাই উন্মুখ হয়ে আছেন- বাড়ি ফিরব কবে? আর যারা এক নজর দেখার প্রত্যাশায় তাকিয়ে আছেন সময়ের দিকে, ভাইয়ের অপেক্ষায় বোন। সন্তানের অপেক্ষায় মা। অথবা স্বজনের অপেক্ষায় স্বজনরা। গোটা পরিবেশটাই যেন এক মিলনমেলা। যে মিলনমেলায় এক প্রশান্তি ছাড়া আর কোনো প্রাপ্তির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে এই প্রশান্তির পাশাপাশি আরো একটি পণ্যের সমাগম ঘটে। পণ্যটির নাম বিড়ম্বনা।
ঈদ কেন্দ্র করে রাজধানী ছাড়া মানুষের সঙ্গে পণ্যটির সখ্য বেশি। গত দুই বছর করোনার দাপটে ঈদের আনন্দ ছিল অনেকটাই বিষাদময়। তবে এ বছর করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় মানুষ পুরোদমে ঈদ আনন্দে মেতে উঠবে। সেই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজধানী ছেড়ে পাড়ি জমাবে বাপ-দাদার ভিটেমাটিতে। একটি উৎসবকে কেন্দ্র করে বাড়ির পথে পা বাড়ানোর ঘটনা বিশ্বে প্রায় দুর্লভ। সম্ভবত এটাই আমাদের মেলবন্ধন।
প্রতি বছর শিক্ষা, কর্মসংস্থান কিংবা ভাগ্যবদলের তাড়নায় ঢাকায় আসা মানুষের স্রোত যখন একসঙ্গে রাজধানী ছাড়ে, বিড়ম্বনার সূত্রপাত তখন থেকেই। বাড়ি ফেরাটাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় মানবিক বিপর্যয়ের। বিপুল মানুষের চাপ নিতে পারে না আমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলো। ট্রেন কিংবা লঞ্চ কোনো ক্ষেত্রেই এই দুর্ভোগের নিস্তার নেই। ট্রেনে কিংবা লঞ্চে ধারণক্ষমতার অধিক যাত্রী নিয়ে চলাচলে প্রায়ই সৃষ্টি হয় দুর্ঘটনার। স্বপ্ন এবং জীবন দুটোকেই হাতের মুঠোয় নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় এসব মানুষকে। সরকারের পক্ষ থেকে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হলেও এর সুফল সাধারণ জনগণ পর্যন্ত কতটা পৌঁছায়, বিষয়টি সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ থেকেছে।
রেল সূত্রে জানা যায়, এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৬ থেকে ৭ জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হতে পারে- এমন প্রস্তুতি আছে সংশ্লিষ্টদের। তবে সেটা যাত্রী চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে হতে পারে। বর্তমানে ২০১টি ইঞ্জিন বিভিন্ন ট্রেনের সঙ্গে চলাচল করছে। ঈদের সময় আরো ১৮টি ইঞ্জিন দিতে পারবে লোকোমোটিভ বিভাগ। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম বাস। ঈদ উপলক্ষে বাস টিকিটের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকায় তৈরি হয় টিকিট কালোবাজারির আশঙ্কা। এ ছাড়া জনদুর্ভোগের আরেক নাম যানজট তো আছেই। রোজা রেখে বাড়ি ফেরা মানুষের জন্য এটি এক আতঙ্কের নাম।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলা বিশেষ করে পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশালের বাসিন্দাদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। অন্যবারের মতো এবারও বিভিন্ন রুটে নামানো হয়েছে রংচংয়ে ও জোড়াতালি দেওয়া ত্রুটিপূর্ণ ফিটনেসের অসংখ্য নৌযান। বর্ষা মৌসুমে পদ্মা ও মেঘনার মতো উত্তাল নদীতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চযাত্রী বহনে কতটা সক্ষম, তা আমাদের জানা নেই। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এবারও বলা হচ্ছে, সবকিছু ঠিকঠাকই থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে যাত্রী পরিবহনের সব প্রস্তুতিই আছে। ঈদের যাত্রাপথ যেন সচল থাকে এবং কোনো ধরনের ভোগান্তি না হয়, সেজন্য প্রস্তুতিরও কমতি নেই। কিন্তু শেষমেশ সেই প্রস্তুতি কতটা থাকবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এক টুকরো আনন্দ কিনতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় কজনকে পথেই জীবন দিতে হবে, তা আমরা জানি না। তবে এই জীবনহানি যেন শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা এবং সময়ের দাবি।