তিমির বনিক, ষ্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের জুড়ী সীমান্তবর্তী উপজেলাবাসীদের মাঝে দেখা দিয়েছে বাঘ আতঙ্ক। উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হাসনাবাদ এবং বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দারা বাঘের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ভয়ে বাঘ মোকাবিলায় রাত জেগে পাহারা দেওয়া হচ্ছে এসব গ্রামে। গ্রামের চারদিক ঘেরা টিলা—জঙ্গলে। মাঝেমধ্যেই এসব এলাকায় বাঘের উপস্থিতি দেখা যায়।
এলাকাবাসীর সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরেই উপজেলার হাসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে রাতে দুইটি বাঘকে চলাচল করতে দেখেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। সারা রাত বিচরণের পর ভোরের দিকে বাঘ দুইটি পাশের বন-জঙ্গলে চলে যায় এমনটাই আপাতত ধারণা করছেন এলাকাবাসী।
ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে বাঘের দেখা সম্প্রতি পাওয়া না গেলেও সজাগ থেকে পাহারা দেন এ গ্রামের বাসিন্দারা। আগেও এ এলাকা জঙ্গলে ঘেরা ছিল। চলাচল ছিল বাঘ, শিয়াল, হরিণ, গন্ধগোকুলসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এখনো মাঝেমাঝে খাবারের জন্য দুই একটি বাঘ লোকালয়ে চলে আসে বলে জানায় স্থানীয়রা।
হাসনাবাদ গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন মোজাম্মেল হোসেন। তার কাছে এলাকায় বাঘের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, আমি যদিও দেখিনি তবে শুনেছি ইদানিং স্কুল মাঠে (হাসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) দুইটি চিতা বাঘ চলাচল করে। এ এলাকায় এসব অস্বাভাবিক কিছু না। আগে এখানে বাঘ, হরিণের চলাচল ছিল। বাঘ আক্রমণ করতে পারে এই আতঙ্কে গ্রামবাসী পালা করে রাতে পাহারা দিচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, এই এলাকায় এক সময় পাহাড় জঙ্গল ছিল। আগে মানুষের বসতি ছিল না। তখন এসব এলাকায় বড় বড় বাঘ, হরিণ, হাতিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ছিল। ধীরে ধীরে মানুষের বসতি গড়ে ওঠার কারণে এসব পশু-পাখি চলে যায়। এখনও বাহাদুরপুরের আগে কিছু জঙ্গল রয়েছে যেসব এলাকায় কিছু বন্যপ্রাণী বসবাস করে। বেশিরভাগ সময় বানরের দল খাদ্যের অভাবে লোকালয়ে এসে বসতবাড়ির ফলমূল খেয়ে চলে যায়। এখনও সন্ধ্যার সময় এসব এলাকায় শেয়ালের পাল নামে।
তবে গত কয়েকদিন থেকে সন্ধ্যার পর দুইটি বাঘ দেখতে পাচ্ছেন স্থানীয়রা। যেকোনো সময় আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে রাত জেগে পাহারা দেওয়া হচ্ছে বলে তারা জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আজাদ মিয়া জানান, কয়েকজন নারী বাঘ দেখেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। বাঘগুলোর উপস্থিতি সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা গেলে বন্যপ্রাণী অফিসে খবর দেওয়া হবে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এসব এলাকায় চিতা বাঘ থাকার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে মেছো বিড়াল থাকতে পারে হয়তো। লোক পাঠিয়ে খবর নেওয়া হবে। আসলে কি এমন অস্তিত্ব আছে কি না তা জানা হবে।