ক্যামেলিয়া নিশান: কয়েক দিন যাবত, ফেসবুক, নিউজ ফিডে ইউটিউবে একটাই নিউজের ঝড় ছিলো। সেটা হচ্ছে চিত্র নায়িকা পরিমনি, এবং তার স্বামী অভিনেতা রাজের সাথে ডিভোর্সের রটনা নিয়ে। এ খবরের কাছে বাংলাদেশের মেট্রোরেলের মতো এতো বড় একটা আনন্দের সংবাদকে ছাপিয়ে পরী, রাজ এর ডিভোর্স নিয়ে বেশি নিউজ বেশি মাতা মাতি হয়েছে সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় বলবো। ভাইরে, ভাই, বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অলিতে-গলিতে যে এতো অসাংবাদিক এতো ইউটিউবার ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে তা জানতে পারলাম। অথচ চেনা, জানা, অচেনা, ফিল্মের, অনেক নতুন প্রবীণ সাংবাদিক রা এসব নিয়ে কোনো রকমের মাথাই ঘামাননি। কিন্তু ঐ সাংবাদিকদের সাংঘাতিক নিউজে ফেসবুকে ঢোকা যাচ্ছিলো না।
পরে আবার শুরু হয়েছিল পরী, রাজের মিল হওয়া কেন্দ্রীক ঘটনাবলি নিয়ে। আমার প্রশ্ন, যারা স্বামী স্ত্রীর খুনসুটি ঝগড়া বিবাদ নিয়ে, চিৎকার চেচামেচি করে গলা ভেঙে ফেলছেন, আপনারা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনার স্ত্রী, মা, আপনার বোন, আপনার ভাইয়ের বৌ, আপনার পাশের বাড়ীর ভাবী, বা আপারা কোনোদিন স্বামীর সাথে ঝগড়া করে, বাপের বাড়ি, বোনের বাড়ী, আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে যায়নি? বা আপনি বলেননি তোমার সাথে আর নয় বা আপনার স্ত্রী, বলেননি যে, তোমার সংসার করা সম্ভব না। কোন স্বামী স্ত্রী ঝগড়া না করে? স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা একটা কাগজের সম্পর্ক, একটা পবিত্র সুরা, বা মন্ত্রের সম্পর্ক। ভালোবাসা, বিশ্বাস, আর সমঝোতা, নির্ভরতায় গড়া সম্পর্ক। এখানে বিশ থেকে উনিশ হলেই হলেই সম্পর্কে সমস্যা হতেই পারে।
মা, বাবা, ভাই, বোন খালা,ফুপু, চাচার সাথে কতো বড় বড় সমস্যা ও দেখা যায় জীবনে। এমনও পরিবার আছে যেখানে ভাই ,ভাইয়ের সাথে, বোন, বোনের সাথে ঝগড়া বিবাদে থানা পুলিশ পর্যন্ত হয়। সেটা নিয়ে কোনো রকমের কথা হয়না। কারণ ভাই বোন, মা,বাবার সাথে ডিভোর্স হয়না। কোনোদিন না কোনদিন আবার সুসম্পর্ক হয়। কিন্তু স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক অবনতি মানে ডিভোর্স। সারাজীবনের জন্য সম্পর্ক শেষ। আর এই ডিভোর্সের বলী হয় সন্তানেরা। সমাজে তাদের অনেক নিচু চোখে দেখে, হয়তো মা একজনকে বিয়ে করে সঙ্গী খুঁজে পায়, বা বাবাও আর একজনকে। কিন্তু এই সন্তান গুলো মা, বাবার ভালোবাসা ছাড়া অবহেলা অনাদরে কষ্টে বড় হয়। অনেক সময় তারা ঠিক মতো সুস্হ মস্তিষ্কে ও বেড়ে ওঠে না।
সমাজে, আমরা তাদের বলি ব্রোকেন ফ্যামিলির ছেলে মেয়ে। আর এসব চিন্তা ভাবনা করেই অনেক স্বামী স্ত্রী ছোট খাটো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হলেও ডিভোর্সের পর্যায়ে যেতে চায় না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যে স্ত্রীগন সেলিব্রিটি বা আত্মনির্ভশীল নারী তারা সামান্য সমস্যা হলেও তারা ডিভোর্সের ডিসিশন নিতে দ্বিধা বোধ করেন না। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি বিল গেটস এবং তার স্ত্রী ২৭ বছর একসাথে সংসার জীবন। তিন, তিন টি বড় বড় সন্তান থাকা সত্বেও সামান্য মতের অমিল দেখা দেওয়াতে তারা দুজনে মিউচ্যুয়ালী ডিভোর্স এর ডিসিশন নেন। এখনো, তাদের কাপল পিকচার গুলো স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। তারা কি তখোনো জানতেন তাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে? ছবি গুলো যখন তুলে আপলোড দিয়েছিলেন তখন হয়তো তারা তুমুল প্রেমে ভেসে, যাচ্ছিলেন। ওটাই ছিলো তখন তাদের সময়ের দাবী, সময়ের প্রয়োজন। ঠিক আমরাও যখন তুমুল প্রেম ভালোবাসায় থাকি তখন মনে হয় আমার সঙ্গী সেরা সঙ্গী।
আবার সামান্য মতবিরোধ, ঝগড়া বিবাদে মনে হয় ভুল করেছিলাম তাকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পছন্দ করে। ইস,কতো দোষ ধরে বেড়াই তখন। পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষটাই মনে হয় আমার ঘাড়ে এসে পড়েছে। পরী মনি একজন নায়িকা, সেলিব্রিটি হলেও সে মানুষ। তার আবেগ, রাগ ক্রোধ, ভালোবাসা, অভিমান ও আছে। স্বামীর, সাথে এইগুলো করা তার জন্মগত অধিকার। পৃথিবীতে জন্ম, মৃত্যু আর বিয়ে। কখন কার জীবনে আসে, কখন কার জীবন থেকে চলে যায় কেউ বলতে পারে না। কতো বড় বড় সমস্যা হওয়ার পরেও কিছু মানুষ কে দেখেছি আবার সব ভুলে সংসার করতে। আবার অনেক সামান্য ঠুনকো কারণেও, কাছ দেখেছি সংসার ছেড়ে চিরজীবনের মতো বিদায় নিতে।
আসলে একজন মানুষ হিসেবে আমাদের চাওয়া থাকবে প্রত্যেকের সংসার জীবন সুস্থ সুন্দর থাকুক। অন্যের সংসার ভাঙার জন্য কিছু মানুষের জন্ম হয়েছে পৃথিবীতে, যারা দুপক্ষের বিরুদ্ধে কিছু বাজে, কথা কিছু আজে বাজে, অপপ্রচার করে সংসার ধ্বংস করতে। তবে এইসময়ে কিছু মানুষ রুপি শয়তান কে চেনা হয়ে যায়। সেই সব শয়তান থেকে প্রত্যেকেরই দূরে থাকা উচিৎ।
অভিনেত্রী শিরিন শীলা তার ফেসবুক আইডি তে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন, “অভিনন্দন দোস্ত পরীমনি, সব ভুল বোঝা বুঝির অবসান ঘটিয়ে আনার নতুন করে সংসার শুরু করো। যারা পরীমনির সংসারে ভাঙন দেখে খুশি হয়েছিলে তারা বিষ খেয়ে মরে যাও। কারণ, যারা অন্যের সুখ দেখতে পারেনা তাদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
তবে সেলিব্রিটিরা যদি তাদের বেডরুমের খবরাখবর স্যোসাল মিডিয়ায় না ছড়িয়ে দেয় তাহলে সাধারণ মানুষও এতো মাতামাতি করে না।