তিমির বনিক, ষ্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে সদস্য সচিবের স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ‘পশ্চিম বর্ণি রাতখাল ব্রিজ হতে বারহাল জামে মসজিদ’ পর্যন্ত গ্রামীণ রাস্তার মাটি ভরাটের টিআর বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের এমন অভিযোগ করা হয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের উপর ভিত্তি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন প্রকল্প কমিটির সদস্য সচিব তানবির আহমদ।
অভিযোগ সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, বর্ণি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ‘পশ্চিম বর্নি রাতখাল ব্রিজ হতে বারহাল জামে মসজিদ’ পর্যন্ত রাস্তার মাটি ভরাটের ২০২২-২৩ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী বিশেষ খাত থেকে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল হোসেন নিজেই প্রকল্পের সভাপতি ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা তানবির আহমদকে সদস্য সচিব করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি জমা দেন। কিন্তু ইউপি সদস্য আবুল হোসেন সদস্য সচিবের স্বাক্ষর জাল করে গত ৭ মে প্রকল্পের বরাদ্দের প্রথম কিস্তি ও ২৪ মে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা উত্তোলন করেন। তবে টাকা উত্তোলন করলেও ইউপি সদস্য রাস্তায় এক টাকারও কোনো কাজ করেনি। এতে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে বারোহাল গ্রামে গেলে ছেরাগ আলী, দুলাল আহমদ, কামাল উদ্দিন, ওয়াতির আলী, মাখন মিয়া সহ এলাকার অর্ধশত বাসিন্দা বলেন, ‘‘প্রতি বছর বন্যায় আমাদের রাস্তা তলিয়ে যায়। মসজিদে যাওয়া-আসার খুব কষ্ট হয়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটা বরাদ্দের কাজ হয়েছিল। এটা পর্যাপ্ত না হওয়ায় আমরা পরিবেশমন্ত্রীর কাছে আরেকটা বরাদ্দের জন্য আবেদন করি। মন্ত্রী আমাদের কথা চিন্তা করে দুর্ভোগ লাঘবে রাস্তা সংস্কারের জন্য টিআর বরাদ্দ দেন। কিন্তু বরাদ্দ প্রদানের দীর্ঘদিন পরও রাস্তায় কাজ করেননি ইউপি সদস্য আবুল হোসেন। পরে শুনেছি ইউপি সদস্য আবুল সদস্য সচিবের স্বাক্ষর জাল করে টাকা তুলে নিয়েছেন। কোনো কাজ না করেই তিনি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
’’প্রকল্পের সদস্য সচিব ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহমদ বলেন, ‘‘পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এলাকাবাসীর দাবীতে রাস্তা সংস্কারে (মাটির কাজ) ৫০ হাজার টাকা টিআর বরাদ্দ দেন। ইউপি সদস্য আবুল হোসেন আমাকে প্রকল্পের সদস্য সচিব করলেও বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের বিষয়টি আমাকে জানাননি। আমার স্বাক্ষর জাল করে টাকা তুলেছেন। কোনো কাজও করাননি। পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন। এতে এলাকায় আ.লীগের বদনাম হচ্ছে।’’
এ ব্যাপারে আলাপকালে প্রকল্প কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য আবুল হোসেনের দাবি ‘‘তিনি ওই রাস্তায় কাজ করেছেন’’। তবে সদস্য সচিবের স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। বড়লেখা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খাঁন মুঠোফোনে বলেন, ‘‘ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যায়ন জমা দিয়ে প্রকল্প কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য আবুল হোসেন বরাদ্দ উত্তোলন করেছেন। সংশ্লিষ্ট রাস্তায় কোন কাজ না করার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জেনেছি। আমরা খোঁজ খবরও নিয়েছি। ওই ইউপি সদস্যকে শোকজ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।’’