বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোরের শার্শায় মুখিকচু (সারকচু) সবজি চাষ লাভ জনক হওয়ায় এই চাষে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা। কচু চাষে তুলনামূলক রোগবালাই ও সার প্রয়োজন কম, উৎপাদন ভাল ও স্থানীয় ভাবে সহজলভ্য পাইকারি বাজার সৃষ্টি। নিয়মিত কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের উৎসাহ ও পরার্মশ প্রদান।
অল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় মুখিকচু চাষে একদিকে যেমন আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। অন্যদিকে মৌসুমি এই কাজে নিন্ম আয়ের পরিবারের সদস্যদের অন্তভূক্তিতে খন্ডকালিন কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ পরিবার গুলোতে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থাও হচ্ছে। সব মিলিয়ে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় প্রতি মৌসুমে বৃদ্ধি পাচ্ছে মুখিকচু চাষ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর শার্শা উপজেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে মুখিকচু সবজি চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় রোগ বালাই কম। অল্প খরচে অধিক লাভ জনক হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর ৫ হেক্টর বেশি জমিতে মুখি কচুর চাষ হয়েছে।
সব চেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নে ৮৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে কেরালখালী-বাসাবাড়ি, বসন্তপুর-পাড়িয়ারঘোপ, কন্দর্পপুর-ভায়না এলাকাতেই ৫০ হেক্টর জমিতে মুখি কচুর চাষ হয়েছে।
উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, শত শত বিঘার দেশি ও উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড জাতের মুখিকচুর চাষ করা হয়েছে। সেই কচুর সবুজ পাতা-গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। দেখে মনে হয় এ যেন সবুজের সমারোহ। কথা হয় বাসাবাড়ি বাজারে পাড়িয়ারঘোপ গ্রামের মুখিকচু চাষি সিদ্দিক বিশ্বাসের সাথে। তিনি বলেন, এ বছর তিনি সাড়ে চার বিঘা জমিতে মুখিকচু চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং তেমন কোন রোগবালাই না হওয়ায় প্রতি বিঘায় আনুমানিক ৭০-৮০ মণ কচু উৎপাদনের আশা প্রকাশ করছেন।
তিনি আরো বলেন, কচু তোলার সময়ে যদি বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে পড়তে না হয় তবে সব খরচ বাদ দিয়ে তিনি দুই লক্ষাধিক টাকার লাভবান হবেন।
পাড়িয়ারঘোপের আবু জাফর ও আবদুল্লাহ, কেরালখালির বাবু, মিজান, তোতা, ইমরান, সালাম ও বিপ্লব, ভায়নার আজগার, বসন্তপুরের সাধন ও নৈহাটি গ্রামের তবিসহ বেশ কয়েকজন বড় চাষির সাথে।
তারা সকলে জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহ ও পরামর্শ অনুযায়ী মুখিকচু চাষ করে তারা সকলেই গত বছর বেশ লাভবান হয়েছিলেন। এ বছরও তারা চাষ করেছেন। এ বছর আবহাওয়া ভাল থাকায় সকলেই কচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন এবং সেই সাথে ভাল দাম পাবারও আশা করছেন। সকলে বিঘা প্রতি ৪০-৪৫ হাজার টাকা লাভের মুখ দেখবেন বলে মনে করছেন।
ধান অপেক্ষা সবজি কচু চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় এই অঞ্চলের চাষিদের মধ্যে কচু চাষে মৌসুমি ভিত্তিক আগ্রহ বাড়ছে। এ কাজে এলাকার নিন্ম আয়ের পরিবারের সদস্যরা কচু উৎপাদনে পরিচর্যা, জমিতে কচু তোলা, পরিষ্কার, শ্রমিকের কাজ ও পরিবহনে খন্ডকালিন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সকলে কাজ করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করে এ সময়ে কিছুটা সাবলম্বী হচ্ছেন।
ভায়না গ্রামের গোলাম হোসেন বলেন, তিনি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে মুখিকচুর চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি আগাম কচু তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। কেজি প্রতি দাম ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কাটায় তিন মণ কচু পাচ্ছেন। কচুর দাম ও ভাল ফলন পেয়ে তিনি খুব খুশি।
বাসাবাড়ি বাজারের হালিমা ট্রেডার্সের মালিক কচুর আড়ৎদার শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে চাষিরা পুরোদমে মাঠের উৎপাদনকৃত মুখিকচু না উঠালেও স্থানীয় বাজার গুলোতে ইতিমধ্যে কয়েক জন কৃষক কচু তুলতে শুরু করেছেন। শুরুতে দামও বেশ চড়া। আগামি এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই পুরোদমে বাসাবাড়ি পাইকারি বাজারে শত শত মণ কচু উঠতে শুরু করবে।
এ বাজারে শার্শা উপজেলা ছাড়াও পাশর্^বর্তী ঝিকরগাছা উপজেলার চাষিরাও তাদের উৎপাদিত কচু গত বছরের ন্যায় এ বছরও পাইকারি হিসেবে বিক্রি করবেন। তখন প্রতিদিন এ বাজারের ৩০-৩৫টি আড়ৎ থেকে শত শত, হাজার মণ কচু পাইকাররা ট্রাক-পিকআপ যোগে সিলেট, ঢাকা, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, মাগুরা, যশোর ও সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাবেন।
বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকরা ভ্যান, ইজিবাইক, নছিমন যোগে কচু বাজারে নিয়ে আসবেন। এ সময় চাষি, আড়ৎদার ও পাইকারদের হাকডাকে মুখোরিত হয়ে উঠবে বাসাবাড়ি পাইকার বাজার।
নিজামপুর ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা অসিত কুমার মন্ডল বলেন, মুখিকচু সবজি চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা ও নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। মালের গ্রেডিং বিষয়ে ধারণাসহ উৎপাদিত পণ্য সহজলভ্য ভাবে বিক্রির জন্য উপজেলার বাসাবাড়ি বাজারে আমার ব্লকে এলাকায় পাইকারি বাজার সৃষ্টি করণে কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে কচু চাষ। আগামি ১০-১৫ দিনের মধ্যে পুরোদমে বাজারে কচু উঠতে শুরু করবে। এই অঞ্চলের চাষিদের মুখিকচু চাষ সরাসরি দেখতে ইতিমধ্যে জেলার অন্য উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা সেখানকার চাষিদের সাথে নিয়ে চাষে উদ্বুদ্ধকরণ করতে সরেজমিন মাঠ পরিদর্শন করে গেছেন।
তিনি আরো বলেন, নিজামপুর ইউনিয়নের মধ্যে আমার ব্লক এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি ৫০ হেক্টর জমিতে কচু চাষ করা হয়েছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মন্ডল বলেন, মুখিকচু চাষে কোন মাঠ প্রদর্শনী নেই। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা থাকবে। সব সময় সরকার সব কিছু দেন না। যখন যেটা দেন আমরা সেটা চাষিদের দিয়ে থাকি।