নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশে করের আওতা বাড়াতে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী (টিআরপি) নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সম্প্রতি আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী (টিআরপি) বিধিমালা ২০২৩ ইস্যু করেছে এনবিআর।
আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী (টিআরপি) বিধিমালায় মোট ১৯টি ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে কোনো আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে আগামী ২৫ জুনের মধ্যে মতামতের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী (টিআরপি) হতে আগ্রহী প্রার্থীকে এনবিআরে আবেদন করতে হবে।
বিধিমালার ৩ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে কর্মরত নন এরুপ বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। ন্যূনতম স্নাতক পাস হলেই যে কেউ আবেদন করতে পারবেন। আগ্রহী ব্যক্তির কম্পিউটার ও আইসিটি বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান থাকতে হবে। স্বাভাবিক ব্যক্তি করতাদার আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত ও দাখিলের বিষয়ে সম্যক ধারনা থাকতে হবে। বোর্ড কর্তৃক গৃহীত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে এবং টিআইএনধারী হতে হবে বা আগে রিটার্ন দাখিল করেছেন এমন প্রমাণ থাকতে হবে। অর্থাৎ আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীকেও (টিআরপি) রিটার্ন দাখিলকারী করদাতা হতে হবে।
বিধিমালার ৪ ধারায় বলা হয়েছে, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট ও ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা চাটার্ড সেক্রেটারিজ; বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত আইনজীবীরা পরীক্ষা ছাড়াই টিআরপি হিসেবে কাজ করতে পারবেন। সনদপ্রাপ্ত টিআরপি কেবল আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত ও দাখিল করতে পারবেন।
আইসিএসবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ভ্যাট এজেন্ট হওয়ার সুযোগ পেলেও এবারই প্রথম ইনকাম ট্যাক্সে কাজ করার সুযোগ পেল চার্টার্ড সেক্রেটারীজ বা আইসিএসবির সদস্যরা। ফলে চার্টার্ড সেক্রেটারীদের ইনকাম ট্যাক্সে পোয়াবারো অবস্থা।
বিধিমালার ৯ ধারায় বলা হয়েছে, আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত এবং দাখিল অনুসারে একজন টিআরপি শুধুমাত্র আয়কর অধ্যাদেশের ৭৫ ধারার অধীনে একজন করদাতার পক্ষে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত ও দাখিল করতে পারবেন। তবে কোনমতেই আয়কর অধ্যাদেশের ধারা ৭৮, ৭৯, ৮২বিবি(২) ও ৯৩ ধারার অধীনে কোন রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন না এবং এ বিধি অনুসারে শুধুমাত্র বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত অনলাইন মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
বিধিমালার ১২ ধারায় টিআরপিদের জন্য যেসব সুবিধা দেওয়া হবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম তিন বছর আদায় করা ন্যূনতম করের ১০ শতাংশ, পরবর্তী সময়ে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ২ শতাংশ, পরবর্তী ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ১ শতাংশ ও অবশিষ্ট করের ওপর ০.৫০ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন। চতুর্থ ও পঞ্চম বছরের জন্য তিনি যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ১ শতাংশ, দশমিক ৫০ শতাংশ এবং দশমিক ২৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন। তবে কর টিআরপির প্রণোদনার ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ প্রাপ্য হবে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান।
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, করযোগ্য ব্যক্তির সম্মতি নিয়ে তার রিটার্ন প্রস্তুতে সহায়তা করবেন আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী (টিআরপি)। প্রস্তুত করা রিটার্নের একটি কপি করদাতাকে দিতে হবে।
বিধিমালার ১৭ ধারায় অসদুপায় বা অনিয়মের জন্য টিআরপির সনদ ও সহায়তাকারীর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, টিআরপি করদাতাকে রিটার্ন জমার স্লিপ না দিলে, করদাতার তথ্য সঠিকভাবে রিটার্নে উল্লেখ না করলে, প্রতারণামূলকভাবে অর্থ দাবি করলে বা আর্থিক অনিয়ম বা জালিয়াতি করলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে রিটার্নে আয় কম দেখিয়ে কর ফাঁকি দিলে সনদ বাতিল করা হবে। এছাড়া সন্তোষজনক টিআরপি তালিকাভুক্ত করতে ব্যর্থ হলে বা রাজস্ব ও জনস্বার্থ পরিপন্থি কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করবে এনবিআর।
এছাড়া টিআরপি বা সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান করদাতার তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করলে এনবিআর উভয়ের বিরুদ্ধে আয়কর আইনে ফৌজদারি মামলা করতে পারবে।